মঙ্গলবার- ১২ই নভেম্বর, ২০২৪

রাঙ্গুনিয়ায় হাছান মাহমুদের ভাইয়ের দখলে থাকা বনবিভাগের বিপুল জায়গা উদ্ধার

গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৬টি গয়ালের খামার, তিনটি পুকুরের মাছের খামার, তিনটি রেস্টুরেন্ট

রাঙ্গুনিয়ায় হাছান মাহমুদের ভাইয়ের দখলে থাকা বনবিভাগের বিপুল জায়গা উদ্ধার
print news

ণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ছোট ভাই নারী ও মাদকসেবি এরশাদ মাহমুদের অবৈধ দখলে থাকা চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের রাঙ্গুনিয়া খুরুশিয়া রেঞ্জের সংরক্ষিত বনের ৫৫ একর পাহাড়ি জায়গা উদ্ধার করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে দীর্ঘ ১৬ বছর দখলে থাকা জায়গাগুলো সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন বনবিভাগের লোকজন।

বনবিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ তথ্য জানান। তিনি জানান, খুরুশিয়া রেঞ্জের আওতাধীন সুখবিলাস গ্রামের পাহাড়ি এলাকার ৫০ একর বনভূমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সেখানে ৬টি গয়ালঘরে গয়াল খামার এবং পাহাড়ে তিনটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে আসছিলেন এরশাদ মাহমুদ। হাছান মাহমুদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব অপকর্ম করেছেন।

এছাড়া বান্দরবান সড়কের পাশে দশমাইল এলাকায় বনবিভাগের মালিকানাধীন আরও ৫ একর জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্টসহ পুকুর খনন করে পার্ক বানানো হয়েছিলো। দীর্ঘদিন ধরে হাছান মাহমুদের প্রভাব বিস্তার করে দখলে রাখা এই ৫৫ একর বনবিভাগের মালিকানাধীন জায়গা চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এবং সহকারী বনস মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ করা হয়েছে। খুরুশিয়া রেঞ্জ, রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ ও শহর রেঞ্জ চট্টগ্রামের কমীর্রা উচ্ছেদ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, ৬ ঘন্টাব্যাপী উচ্ছেদকালে ৬টি গয়াল ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয় এবং খননকৃত তিনটি পুকুরের পাড় কেটে পানি বের করে দিয়ে জায়গাটি খালি করা হয়। এছাড়া বান্দরবান সড়কের পাশে গড়ে তোলা রেস্টুরেন্টের তিনটি টিনের ঘর, চারটি গোলঘর উচ্ছেদ করা হয় এবং পুকুরটির পানি পাড় কেটে বের করে দেয়া হয়। উচ্ছেদকৃত জায়গায় বনায়ন করা হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া তার দখলে থাকা বনবিভাগের মালিকানাধীন অন্যান্য জায়গাও পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠণের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন ড. হাছান মাহমুদ। পরে তিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হন। এরপর থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াসহ বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সংরক্ষিত বনের জমি নামে-বেনামে অবৈধ দখল শুরু করেন। নিজ গ্রাম সুখবিলাসে খুরুশিয়া রেঞ্জের বনভুমি দখল করে গড়ে তোলেন বেআইনি বন্যপশু গয়ালের খামার। গড়ে তোলেন বাংলো। যেখানে স্থানীয় সুন্দরী নারীদের নিয়ে ধর্ষণ করতেন এরশাদ মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদ। যাদের মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন নদি থেকে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। একইভাবে সংরক্ষিত বনের মূল্যবান গাছ কেটে পাচার, মদ ও ইয়াবা পাচার, অস্ত্র পাচার করেন। বিশেষ করে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদি সন্ত্রাসীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে হাছান মাহমুদের ভাই খালেদ মাহমুদ, এরশাদ মাহমুদ, ব্যক্তিগত কর্মচারি কথিত সাংবাদিক জিগারুল ইসলাম জিগার, এনায়েতুর রহিম, এমরুল করিম রাশেদ, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুল ইসলাম সরফি প্রত্যক্ষভাবে এব কাজ পরিচালনা করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। বর্তমানে হাছান মাহমুদের দখলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালি এলাকায় বিপুল পরিমাণ পাহাড়ি জমি অবৈধ দখলে রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page