এস আলম গ্রুপের গাড়ি বের করে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।
শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি করেন তারা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয় গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়ে এনামুল হক এনামের তত্ত্বাবধানে এস আলম গ্রুপের বেশ কিছু গাড়ি বের করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সহযোগিতা করা হয়েছে। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং সাজানো সংবাদ।
তিনি বলেন, আসল ঘটনা হলো, গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রপের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপি’র নাম দিয়ে টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে এনামুল হক এনামকে অবহিত করা হয়। যদি চাঁদা না দেয়, তাহলে মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। তাই মীর গ্রুপের পক্ষে সহযোগিতা কামনা করেন। বিএনপি’র নাম দিয়ে ফোন করার ঘটনা অবহিত হওয়ার পর এনামুল হক আমাকে জানান। তারপর আমরা কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো অবস্থান করে মীর গ্রুপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপি নাম দিয়ে কেউ যদি কোনও ধরনের চাঁদা দাবি করে তাহলে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টিভিতে প্রচার করেছে আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নয়।
উল্লেখ্য, নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে ফ্যাক্টরি থেকে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতের আঁধারে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। গাড়িগুলোর মধ্যে আছে- বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ ও অডি ব্যান্ডের গাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গাড়িগুলোর ভেতরে বিপুল পরিমাণ টাকা ছিল। কারণ শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেখানে সশরীর উপস্থিতি ও তদারকি করার কথা নয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, অন্তত ১৫ জনের একটি দল এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউসের সামনে আসে। একই সময়ে আরও তিনটি গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে একে একে নামেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, একটি গাড়ি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুরকে নামতে দেখেছেন তিনি। সেই গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসে ছিলেন বলে তিনি ও উপস্থিত অন্যদের ধারণা। নইলে ওয়্যারহাউসে তার ড্রাইভারের আসার কথা নয়।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পরই আমরা বুঝতে পারি শুরুর দিকে আসা ১৫ জনের পুরো দলটিই ছিল মূলত ড্রাইভার। কারণ তাদের একেকজনকে একেকটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো হচ্ছিল। এভাবে আমরা অন্তত ১৪টি গাড়ি নিয়ে যেতে দেখেছি। বিলাসবহুল গাড়িগুলোর সবকটি বের হওয়ার পরই এনামসহ বাকি সব নেতা ওয়্যারহাউসের সামনে থেকে সরে যান। গাড়ি শুধু নয়, গাড়িগুলোর ভেতরে কিছু একটা ছিল। আমাদের ধারণা, সেখানে বিপুল অংকের টাকা ছিল। শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেখানে সশরীরে আসার কথা নয়। বিএনপি নেতাদের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।