ভারতকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলার বাঘিনীরা। ভারতকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে তারা। কোচ পিটার বাটলারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাংলাদেশকে এই জয় এনে দিয়েছেন তহুরা খাতুন-মারিয়া মান্দারা।
বাংলাদেশের নতুন কোচ বাটলার সিনিয়দের পছন্দ করেন না এমন মন্তব্য করেন মনিকা চাকমা। বাংলাদেশি মিডফিল্ডারের এমন মন্তব্য শুনে শিষ্যদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন ইংল্যান্ডের কোচ। সিনিয়রদের সুযোগ দিচ্ছি তারা আমাকে ম্যাচ জয় এনে দিক। সেই চ্যালেঞ্জ জিতেছে মেয়েরা।
নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে বলা যায় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের ওপর আধিপত্যেই দেখিয়েছে বাংলাদেশ। খেলা দেখে মনে হয়েছে ড্রয়ে নয় জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে চেয়েছে মেয়েরা। তাই শুরু থেকেই বল পজিশন ধরে রেখে আক্রমণ চালিয়ে গেছেন তহুরা-শামসুন্নাহার জুনিয়ররা।
সেই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম মিনিটে দুর্দান্ত এক সুযোগ সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ঋতুপর্ণা চাকমার ক্রসে ভারতের বক্সে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় যেতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। কয়েক সেকেন্ড আগে সঠিক জায়গায় পৌঁছালে গোলটা পেয়েই যেত বাংলাদেশ।
সতীর্থের ব্যাকপাস বাংলাদেশি গোলরক্ষক রুপনা চাকমা শট দিতে গেলে পা সামনে দেন মনিষা। তাতে অল্পের জন্য গোলবারে জড়ায়নি বল। তবে ১৮ মিনিটে গোলের আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ। সাবিনা খাতুনের কর্নার থেকে চোখধাঁধানো এক গোল করেন আফিদা খন্দকার। সাবিনার কর্নার কিক ভারতীয় গোলরক্ষক পানথোই চানু ফিস্ট করলে বক্সের ডান প্রান্তে ফাঁকায় বল পান আফিদা। পরে দারুণ এক ভলিতে দূরের পোস্টে বল জড়িয়ে দেন জালে।
২৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে গোলবার ভারতে বাঁচিয়ে দেয়। ঋতুপর্ণার বাঁপায়ের শট বারে লেগে প্রতিহত হয়। তবে ২৯ মিনিটে ঠিকই গোল পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণার ক্রসেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তহুরা খাতুন। সতীর্থের নিঁখুত ক্রসে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় গিয়ে পা লাগিয়ে দেন তিনি।
৩৫ মিনিটে ব্যবধান কমানোর দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিল ভারত। রঞ্জনা চানুর ক্রসে বাংলাদেশি গোলরক্ষককে একাই পেয়েছিলেন বালা দেবী। তবে ভারতীয় অধিনায়ক গোলরক্ষক রুপনা বরাবর শট নিলে গোল পায় না ভারত। একই আক্রমণের ফ্রি কিক থেকেও ব্যবধান কমানোর সুযোগ ছিল ভারতের। তবে এ যাত্রায় বাংলাদেশকে রক্ষা করে পোস্ট। মনিষার নেওয়া ফ্রি কিক বা দিকের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
বিরতিতে যাওয়ার কয়েক মিনিট আগে তৃতীয় গোল পায় বাংলাদেশ। দুই শামসুন্নাহারের যুগলবন্দিতে গোল করেন তহুরা। ৪২ মিনিটে সিনিয়র শামসুন্নাহারের ক্রস বক্সের মধ্যে থাকা জুনিয়র শামসুন্নাহার রিসিভ করেই মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা তহুরাকে দেন। সেই পাসে দারুণ এক শট নেন বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড। বাঁ বারে নেওয়া তার শট ঠেকানোর কোনো উপায়ই ছিল না গোলরক্ষক পানথোই চানুর। বক্সের বাইরে থেকে এমন শট কমই কমই দেখা যায়।
তবে ফিরতি মিনিটে ব্যবধান কমান ভারত। ডান দিক থেকে ডালিমা চিবারের ক্রসে হেডে গোল করেন বালাদেবী। গোলটি অবশ্য রুপনার ভুলে পেয়েছে। বিশ্বস্ত হাতে তালুবন্দি করতে গিয়ে ফসকে দেন বাংলাদেশি গোলরক্ষক। এমন সুর্বন সুযোগ পেয়ে এবার গোল করতে ভুল করেননি ভারতীয় অধিনায়ক।
বিরতির পর গোল শোধ দিতে মরিয়া হওয়া ভারত প্রায় দ্বিতীয় গোল পেয়েছিল। তবে আগের ভুলের ‘প্রায়শ্চিত’ করেন গোলরক্ষক রুপনা। ৫৬ মিনিটে বাঁ দিকে পাখির মতো ঝাঁপিয়ে বদলি নামা রিমপা হালদারের শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। ৬২ মিনিটে আরেকবার বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হন রুপনা। মাত্র ১১ গজ দূর থেকে জ্যোতি চৌহানের নেওয়া শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশি গোলরক্ষক।
৭৯ মিনিটে আরেকটি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে প্রায় মাঝমাঠ থেকে স্বপ্না রানির নেওয়া শট কর্নারের মাধ্যমে প্রতিহত করেন গোলরক্ষক পানথোই। পরে দুই দলই আর কোনো গোল না পেলে বাংলাদেশ জয় পায় ৩-১ গোলে। বাংলাদেশ এতটাই দুর্দান্ত খেলেছে যে ধারাভাষ্যকাররা বলেছেন, এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টর সেরা পারফরম্যান্স।