বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

বিরোধ ভুলে একমঞ্চে জামায়াতের সামশুল-শাহজাহান

বিরোধ ভুলে একমঞ্চে জামায়াতের সামশুল-শাহজাহান
print news

চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর ‘আলোচিত-সমালোচিত’ দুই নেতা শাহজাহান চৌধুরী ও শামসুল ইসলাম। দুজনের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলায়। রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে অনেকটা সাপে-নেউলে সম্পর্ক তাদের। কখনো তা প্রকাশ্যে রূপ না নিলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে অজানা ছিল না কারোই।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দুজনের বিবাদ তুঙ্গে উঠে। যা ধীরে ধীরে চরম তিক্ততায় রূপ নেয়। শামসুলের ‘চালা দানে’ কিছুটা কোণঠাসাও হয়ে পড়েছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। তবে সম্প্রতি কারামুক্ত দুই নেতাকে দেখা গেল রাজনীতির এক মঞ্চে। গত শনিবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক অনুষ্ঠানে এক হয়েছিলেন তারা।

সূত্র বলছে, দীর্ঘ ৫-৬ বছরের বেশি সময় পর রাজনীতির এক মঞ্চে বসলেন তাঁরা। রাজনীতির মাঠে শারীরিক দূরত্ব ঘুচিয়ে এক মঞ্চে বসলেও তাঁদের মধ্যে ‘মানসিক দূরত্ব’ রয়ে গেছে এখনো। যার প্রভাব দেখা গেছে দুই নেতার অনুসারিদের মধ্যেও।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুই নেতার একাধিক অনুসারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুজনের ‘দূরত্ব’ প্রকাশ্যে ঘুচলেও রয়ে গেছে ‘মনে মনে’। তবে এই দূরত্ব সামনে আর প্রকাশ পাবে না—এটা অনেকটা নিশ্চিত। দলের বড় প্রয়োজনে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে দুজনই ব্যক্তিগত স্বার্থ আর বড় করে দেখবেন না ভবিষ্যতে!—এমন সিদ্বান্তে পৌছেঁছেন জামায়াতের এই দুই নেতা।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বন্দ্বের শুরুটা ২০০৮ সাল থেকে। মামলার কারণে দুবারের এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে হয় জামায়াত ইসলামীকে। সেই সময় জামায়াত-শিবিরের দুর্গখ্যাত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে মনোনয়ন পান দলের আরেক নেতা মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম। দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সেখানেই।

পরের নির্বাচনে ফের ওই আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হন শাহজাহান চৌধুরী ও শামসুল ইসলাম দুজনেই। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব গড়ায় চরম পর্যায়ে। দ্বন্দ্বের কারণে নগর জামায়াত থেকে শামসুল ইসলামকে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির করে সরিয়ে নেয় কেন্দ্র। নগর জামায়াতের দায়িত্ব পান তৎকালীন কক্সবাজার জেলা জামায়াতে আমির মোহাম্মদ শাহজাহান। শামসুলের ঘনিষ্ঠ সেই সময়ের নতুন আমির শাহজাহানও তাদের দ্বন্দ্ব দমাতে পারেননি।

আরও পড়ুন :  শান্তিচুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে অশান্তি, চুক্তির মুলে নোবেল পুরুস্কারের লোভ

পরে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে শাহজাহান চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং ও হালিশহর) আসনে এবং শামসুলকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে প্রার্থী হতে। বিরোধ নাকি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল জামায়াতের হাঁড়ির খবর আর হাঁড়িতে থাকেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঢাকায় দুজনের বিরোধ মেটানোর বৈঠকের খবর চলে গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কান পর্যন্ত।

বিরোধ মেটানোর সেই বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দিয়ে শীর্ষ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও গ্রেপ্তার করে। গুঞ্জন রয়েছে, ওই বৈঠক বানচাল করতেই নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বৈঠকের গোপন খবর পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে দুই নেতা ছিলেন এক সেলে। দীর্ঘ আড়াই বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার পর শামসুল ইসলাম মুক্তি পান গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বরে। আর শাহজাহান কারামুক্ত হন গত ১৭ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

কারাসূত্র জানিয়েছে, দুজনে মিলেমিশে ধর্মকর্মে কারাগারের দিন পার করেছেন। একজন অসুস্থ হলে অন্যজন সেবা শুশ্রূষা করতেন। কারামুক্ত হয়ে শাহজাহান চৌধুরী হন নগর জামায়াতের আমির। আর শামসুল এখনো আছেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বেই। পাশাপাশি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

দুই নেতার বিরোধ মিটমাট হওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, অমিল থাকলেই তো মিলে যাওয়ার প্রশ্ন আসবে। দুই নেতাই আড়াই বছরের বেশি সময় একসঙ্গে কারাগারে ছিলেন। একইকক্ষে তাঁরা নামাজ-কালাম পড়েছেন। একজন অন্যজনের সেবা শুশ্রূষা করেছেন।

দ্বন্দ্ব লোকমুখে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত সুশৃঙ্খল দল, এখানে দ্বন্দ্বের কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্র থেকে সব পরিচালিত হয়, ব্যক্তিগতভাবে অঞ্চলভিত্তিক কিছু করার সুযোগ কারো নেই।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page