কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। এটি ওয়াজিব বিধান। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের জন্য মৃতের পক্ষে কোরবানি করা জায়েজ। এটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ এটি ওসিয়তের কোরবানি নয়, বরং কোরবানিদাতা নিজেরই কোরবানি হিসেবে ধর্তব্য হবে। এতে মৃত ব্যক্তি সওয়াব পাবেন।
এই কোরবানির গোশতের বিধান হলো- তা কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতোই নিজে খেতে পারবে। আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যাবে। (আল ফতোয়া মিন আকাবিলিল মাশায়েখ, পৃ-৪৬৯; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ৩/৩৫২; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩২২; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৩৫; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬৯)
তবে মৃতব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করলে এবং তার রেখে যাওয়া এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কোরবানি করলে সেই গোশত নিজেরা খেতে পারবে না, বরং পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে খানিয়া: ৩/৩৫২; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩২২; ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ৯০; ফতোয়ায়ে বাজজাজিয়া: ৩/২৯৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৩৫)
শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওসিয়ত পূরণের জন্য মৃতের সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি খরচ করা যায় না। ওসিয়ত পূরণ করতে হবে ওই এক তৃতীয়াংশ থেকেই। বাকি দুই তৃতীয়াংশ ওয়ারিসদের হক। (হেদায়া: ৪/৬৩৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৬/৪৪৭; আস-সিরাজি ফিল মিরাস: ৪-৫)
মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদ না থাকলে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব নয়। নিজের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হলে আগে নিজের কোরবানি করা উচিত। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যাবে। এতে করে নিজের কোরবানিও আদায় হবে, আবার মৃতকে সওয়াবও পৌঁছানো হবে। এটা নিরাপদ ও উত্তম পদ্ধতি। (মাজমাউল আনহুর: ০২/৫১৬; আল-বাহরুর রায়েক: ০৮/৩১৮; রাদ্দুল মুহতার: ০৯/৪৮৪; কাজিখান: ০৩/৩৫২; তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৪; বাজ্জাজিয়্যাহ আলা হাওয়ামিশিল হিন্দিয়্যা: ০৬/২৯৫; ফাতহুল মুইন: ০৩/৩৮২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ শুদ্ধভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে হেফাজত করুন এবং সবার কোরবানি কবুল করুন। আমিন।
You cannot copy content of this page