বৃহস্পতিবার- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪

নাশকতার উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ

blank
print news

নাশকতার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ। এই রেলপথের চট্টগ্রাম বিভাগে এমন ১৬৮টি স্থান চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে। যেখানে নিরাপত্তা জোরদারে মোতায়েন করা হচ্ছে রেলওয়ের নিয়মিত বাহিনীর সদস্যসহ এক হাজার ১৫৭ আনসার ও পুলিশ। পাশাপাশি নাশকতার ঝুঁকি এড়াতে রাতের বেলায় রেলের গতি কমিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহীদুল ইসলাম রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের রেললাইনে নিরাপত্তা জোরদারে সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রায়শই অবরোধ-হরতাল দেওয়া হচ্ছে। এতে রেলপথ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিরাপদে ট্রেন চলাচলের স্বার্থে এবং যাত্রী সাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে যেকোনও নাশকতা রোধে রেললাইন, বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসমূহ ও রেলওয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন :  রাঙ্গুনিয়ার পোল শিক্ষিকা মালেকা দু‘বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর স. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিরাপদে ট্রেন চলাচলের স্বার্থে এবং যাত্রী সাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪৮ জন পিসি ও ৭৪৪ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তারই আলোকে পুলিশ ও আনসার সদস্যগণ রেললাইনে কর্মরত রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিতদের সঙ্গে এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে রেলপথ পাহারাসহ বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দফতর ও রেলওয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিয়োজিত থাকবেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, হরতাল-অবরোধে রেল এবং রেললাইনে নাশকতা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা একটা সার্ভে (জরিপ) করেছি। ওখানে ১৬৮টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ওখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নাশকতা এড়াতে এক হাজার ১৫৭ পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাতের ট্রেনগুলো চলাচলে গতি কমিয়ে দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ রেলপথগুলোতে কয়েক ঘণ্টা পরপর ট্রলি চালিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন :  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও অফিসের ঘুষের কবলে আউটসোর্সিং শ্রমিকরা

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগে চিহ্নিত ১৬৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা লাকসাম পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে ১১০টি, চট্টগ্রাম নাজিরহাট রুটে ১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ, ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রুটে ১২টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ এবং সদ্য নির্মিত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনে ২৩টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থানের মধ্যে দোহাজারী স্টেশন এলাকা, ডান্টি বাজার এলাকা, সাতকানিয়া স্টেশন এলাকা, লোহাগাড়া স্টেশন, গোয়ালমারা এলাকা, এলিফ্যান্ট ওভারপাস এলাকা, হারবাং স্টেশন এলাকা, চকরিয়া স্টেশন, ডুলাহাজরা স্টেশন, খুটাখালী (চকরিয়া), নেদা কচ্ছপিয়া (ঈদগাঁও), নাপিতখালী (ঈদগাঁও), ইসলামাবাদ স্টেশন (ঈদগাঁও), ঈদগাঁও লেভেল ক্রসিং গেট, রশিদ নগর (ঈদগাঁও), পানিরছড়া (ঈদগাঁও), মহেষকুম জোয়ারী আনালা (রামু), চা বাগান (রামু), রামু স্টেশন, রামু আন্ডার পাস, রাজারকুল (রামু), কাঠির মাথা (কক্সবাজার) ও কক্সবাজার স্টেশন এলাকা অন্যতম।

আরও পড়ুন :  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও অফিসের ঘুষের কবলে আউটসোর্সিং শ্রমিকরা

সম্প্রতি রেলওয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও এসএসএই-ওয়েম্যানদের অধীন স্টাফদের সমন্বয়ে অ্যাডভান্স পাইলটিংয়েরে ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর ট্রলি ও লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্টেশন মাস্টার, পরিদর্শকরা ও এসএসএই-ওয়েম্যানরা নিজ নিজ এলাকায় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে নিয়মিত কন্ট্রোল অফিসকে জানাবেন।

প্রত্যেক ডিইএন, এইএন এবং এসএসএই-ওয়েম্যানরা তাদের অধীন ওয়েম্যানদের এলাকা উল্লেখ করে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ডিভিশনাল কন্ট্রোলে সরবরাহ করবেন। ডিভিশনাল কন্ট্রোলের মোবাইল নম্বরগুলোও স্টাফদেরকে সরবরাহ করতে হবে। একইসঙ্গে কন্ট্রোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার বিষয়েও বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, রেল এবং রেললাইনের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করছি কেউ নাশকতা করে পাড় পাবে না।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page