বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম-১০ আসন

চট্টগ্রামে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ ইসির

print news

মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সরকারি অনুদানের চেক দিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ অবস্থায় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অ-আমলোযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ করায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) সকালে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ইসির নির্দেশনা চট্টগ্রামে জেলা ও খুলশী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে পাঠিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (আইন) মো. আব্দুছ সালাম। বিষয়টি নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মামলা করা হবে। মামলা দায়েরের প্রাথমিক প্রস্তুতি আমাদের আছে।

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, দ্¦াদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তম্মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন-নৌকা প্রতিকে মহিউদ্দিন বাচ্চু, ফুলকপি প্রতিকে এম মনজুর আলম এবং কেটলি প্রতিকে ফরিদ মাহমুদ।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

এর মধ্যে ফুলকপি প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলম গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরের আসনসমূহের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়ে বাচ্চুর বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ আনেন।

অভিযোগে বলা হয়, গত ২২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের আগে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম-১০ আসনের সকল মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ব্যক্তিগতভাবে এক হাজার টাকা করে দেন। এছাড়া ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের মাদানি মসজিদে এক লাখ টাকার একটি চেক দেন যা ওই মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের আগে খুতবায় মুসল্লিদের অবহিত করেন। একইভাবে ২৪ ডিসেম্বর লালখান বাজারে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ৬০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ করেন।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

রিটার্নিং কর্মকর্তা এম মনজুর আলমের অভিযোগ তদন্তের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠান। কমিটির তলবে মহিউদ্দিন বাচ্চু গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগের জবাব দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, এ অভিযোগ স¤পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অনুদান সরকারিভাবে বরাদ্দ হওয়া বলে তিনি দাবি করেন।

অন্যদিকে কমিটি অভিযোগকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমকেও অভিযোগের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের জন্য নোটিশ দেয়। তিনি অভিযোগের সমর্থনে স্থিরচিত্র, অনুদানের অর্থ বিতরণের খামের কপি ও মসজিদে বৈঠকের ৬টি ছবি দাখিল করেন।

এরপর কমিটির পক্ষ থেকে নগরীর হালিশহরের নতুনবাজার জামে মসজিদ, নয়াবাজার ও আব্বাস পাড়া (মাদানি) জামে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, কমিটির সভাপতি, সাধারণ স¤পাদক ও ক্যাশিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সাক্ষ্য এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে গত ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায় কমিটি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম ও জেলা জজ নাজমুল হোসেন প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।

আরও পড়ুন :  বৈদেশিক মুদ্রাসহ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাত্রী আটক

এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সরকারি অনুদানের চেক দিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ অবস্থায় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অ-আমলোযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, উপ নির্বাচনে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি যে অনুদানগুলো আছে সেগুলো বিতরণের দায়িত্ব আমারই। আইনগতভাবে যে সময়ের মধ্যে বিতরণ করার নিয়ম সে সময়ের মধ্যেই আমি সেটাই করেছি। যাকে বা যে প্রতিষ্ঠানকে দিলাম সে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ব্যক্তি স্বয়ং গিয়ে স্বাক্ষর করে চেক গ্রহণ করবেন। কারো হাতে আমি চেক তুলে দেয়নি।

ঈশান/সুম/সুপ

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page