সোমবার- ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪

এস আলম গ্রুপের কারখানায় এক লাখ টন চিনি পুড়ে ছাই

এস আলম গ্রুপের কারখানায় এক লাখ টন চিনি পুড়ে ছাই
print news

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ইছাপুর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এক লাখ টন চিনি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকাল ৩ টা ৫০ মিনিটের দিকে মিলের ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। রাত ১১ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। হতাহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি।

আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ২০টি ইউনিট ক্রমান্বয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। তাতেও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নির্বাপণ কাজে যোগ দেয় কোস্টগার্ড ও বিমানবাহিনীর একাধিক ইউনিট। এরপরও চিনির কাঁচামালের গুদামটিতে আগুন জ্বলছে এখনো।

শিল্প গ্রুপটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসন্ন রমজান ঘিরে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি এক নম্বর গুদামে মজুত করা হয়েছিল। যার অবশিষ্ট আর নেই। সব চিনি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বিকাল ৪টায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রথম আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে পটিয়া, চন্দনপুরা ও আগ্রাবাদের আরও ৯টি ইউনিট আগুন নির্বাপণে যোগ দেয়। এরপরও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় চন্দনপুরা ও কর্ণফুলী ফায়ার সার্ভিসের আরও আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

কর্ণফুলী ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ বরঞ্জীব বড়ুয়া বলেন, ‘সুগার মিলে লাগা আগুন মুহূর্তেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট। সাড়ে সাত ঘণ্টা চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তাও জানা যায়নি।’

মিলের কর্মকর্তারা বলছেন, সুগার মিলের ছয়টি গোডাউনের মধ্যে একটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে আমদানি করা অপরিশোধিত চিনি রাখা ছিল। আগুনের তীব্রতা বাড়ার কারণে অন্য গোডাউনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন তারা।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, গোডাউন ভর্তি সুগার ছিল। পাঁচতলা ভবনের মতো উঁচু গোডাউনটির আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসলেও অনেকটাই কমে এসেছে। আগুনে কোনো হতাহত নেই দাবি করে তিনি বলেন, আশেপাশের স্থাপনাগুলোতে আগুন ছড়ানো ঠেকানো গেছে।

আরও পড়ুন :  প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত মুন্নী সাহা, ছাড়া পেলেন শর্তসাপেক্ষে

এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেছেন, রমজানের জন্য এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি মজুত করা হয়েছিল। এই চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল। পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে চিনি আর অবশিষ্ট নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে রমজানে আমাদের পক্ষে বাজারে চিনি দেওয়া সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, মিল চালু থাকা অবস্থায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যায়। ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কিনা বা কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত, এর কিছুই আমরা জানতে পারিনি। আগুন যেন মূল কারখানায় ছড়িয়ে না পড়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা সে চেষ্টাই করেন। আমরাও তাদের সহায়তা করি।

এস আলম গ্রুপের মানবস¤পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, এস আলমের এই কারখানায় আমদানি করা কাঁচা চিনি পরিশোধন করা হয়। কারখানায় চার লাখ মেট্রিক টন ক্যাপাসিটি আছে। বিকাল ৪টার দিকে ইউনিট-ওয়ানের গুদামে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি ছিল।’

আরও পড়ুন :  কক্সবাজার থেকে পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন গেল বার আউলিয়া

তিনি বলেন, চিনির মিলের ছয়টি গোডাউনের মধ্যে আগুন এখনো (রাত সাড়ে ৮টা) একটিতে সীমাবদ্ধ আছে। আগুন নির্বাপণ কাজে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর একাধিক ইউনিট। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মিলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে দুটি প্ল্যান্টে পরিশোধন করা হয়। এর মধ্যে প্ল্যান্ট-১ এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯০০ টন আর প্ল্যান্ট-২ এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রযুক্তি এবং কারিগরি সহায়তায় এই কারখানাটি পরিচালিত হয়।

এর আগে গত শুক্রবার বাকলিয়া এক্সেস রোডের একটি হিমাগারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। হিমাগারটি ছিল এস আলম গ্রুপের মালিক মাসুদুল আলমের বড় ভাই শহীদুল আলমের।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page