আঁর পুতুরে আঁর বুকুত আনি দ, কোম্পানি টেঁয়া নদিলি ডাহাইত অলে আঁর পুতুরে মারি ফেলাইবু (আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন, জাহাজের কোম্পানি টাকা না দিলে জলদস্যুরা আমার ছেলেমে মেরে ফেলবে)। কান্নাজড়িত কন্ঠেে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুর কবলে পড়া পণ্যবাহী বাংলাদেশি জাহাজের নাবিক নুরউদ্দিনের (৩৫) মা ইসলাম খাতুন।
নুরউদ্দিন কর্ণফুলী উপজেলার শাহ মিরপুর এলাকার মৃত আমিন শরীফের ছেলে। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে নুরউদ্দিন সবার ছোট। তার স্ত্রী ও চার বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া পণ্যবাহী বাংলাদেশি জাহাজের ২৩ নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে একজন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার নুরউদ্দিন এবং তিনজন আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর সেন্টার এলাকার।
তারা হলেন- বৈরাগ বন্দরের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে শামসুদ্দিন শিমুল (৩১), উত্তর বন্দর এলাকার মো গাজু মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৭) ও বদলপুরা এলাকার আক্তার হোসেনের ছেলে আসিফুর রহমান (২৪)।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নুরউদ্দিনের শাহ মিরপুর এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার মা ইসলাম খাতুন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে আছেন। তার চার বছরের নাতিটা কোলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিল। বাড়িতে স্বজনদের দুশ্চিন্তার ভাব। এ সময় নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস এসআর শিপিং লিমিটেডের অফিসে গিয়েছেন বলে জানান।
নুরউদ্দিনের মা ইসলাম খাতুন বলেন, আমার ছেলে আট-দশ বছর ধরে জাহাজে চাকরি করছেন। কোনদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। মঙ্গলবার মাগরিবের সময় ফোনে আমাদের জানান তাদের জাহাজ ডাকাতেরা ঘিরে ফেলেছে, ডাকাতরা আমার মোবাইল নিয়ে নেবে, আর কথা বলতে পারব না। তিনি আরো জানান, আমার ছেলে বলেছেন কোম্পানি টাকা না দিলে আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলবে।
নুরউদ্দিনের মা আরো বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় নুরউদ্দিনের সঙ্গে। তখন ছেলে বলেছেন তাদের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। জাহাজে ৫০-৬০ জন ডাকাত। সবার হাতে ছিল অস্ত্রশস্ত্র। এসময় মোবাইল কেড়ে নেওয়ার আগে একটি বার্তা পাঠায় মুঠোফোনে। সেখানে আমার ছেলে বলেন, টাকা না দিলে একজন একজন করে সবাইকে মেরে ফেলবে বলছে ডাকাতরা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেডের ৫৮ হাজার টন এর পণ্য পরিবহনক্ষমতা এমভি আবদুল্লাহ একটি জাহাজ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এসময় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে তিন নাবিকের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও একজনের বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলায়।