বৃহস্পতিবার- ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪

সিএসই নিয়ে পড়বেন বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া চট্টগ্রামের তামিম

সিএসই নিয়ে পড়বেন বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া চট্টগ্রামের তামিম
print news

ম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) নিয়ে পড়বেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করা চট্টগ্রামের রাউজানের প্রবাসী পরিবারের সন্তান আদনান আহমেদ তামিম।

বুধবার (২০ মার্চ) রাত ৮টায় এ তথ্য জানান আদনান আহমেদ তামিমের মামা মাওলানা জানে আলম। তিনি বলেন, আমার ভাগিনার সফলতায় আমাদের পুরো পরিবার এবং এলাকাবাসী আনন্দিত ও গর্বিত।

তিনি জানান, আদনান আহমেদ তামিম রাউজান উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেপারী পাড়া কছির মোহাম্মদের বাড়ির প্রবাসী মাওলানা আবু তৈয়ব ও রুবি আকতারের ছেলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তামিম ২য় সন্তান। সে রাজধানীর নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী ছিল।

সেখান থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় আদনান আহমেদ তামিম। গত ১৯ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে প্রথম স্থান অধিকার কওে তামিম।

বুয়েটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কমিটির সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জীবন পোদ্দারের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৩০৯ জন ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। মেধাতালিকা ও পছন্দক্রম অনুসারে প্রার্থীদের বিভাগ বণ্টনও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন :  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও অফিসের ঘুষের কবলে আউটসোর্সিং শ্রমিকরা

বুয়েটে কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস কৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদসমূহের অধীনে ১৩টি বিভাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য এলাকার ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীভুক্ত প্রার্থীদের জন্য প্রকৌশল বিভাগসমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জন্য তিনটি ও স্থাপত্য বিভাগে একটি সংরক্ষিত আসনসহ মোট ১ হাজার ৩০৯টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই আসনের বিপরীতে অংশ প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মোট ৬ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে তামিম প্রথম স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করেন।

এর আগে তামিম চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

অন্যদিকে তামিমের বড় ভাই তারেকও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এবার সফলতা অর্জন করে। সে চট্টগ্রাম নগরীর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। ভাল একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ ও দশের সেবা করতে পারে মত তামিমের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া চেয়েছেন তারেক।

তারেক বলেন, আমার ভাই আদনান ঘুমানো, নামাজ, খাওয়া ছাড়া বাকি পুরো সময়ই লেখাপড়া করেছে। যে প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য সে লেখাপড়া করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানেই প্রথম হয়েছে। এটা আমাদের ভালো লাগছে।

আরও পড়ুন :  রাঙ্গুনিয়ার পোল শিক্ষিকা মালেকা দু‘বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর স. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!

তারেক আরও বলেন, বুয়েটে ক¤িপউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তামিম। এটা অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল তার। যেকোনো টেক জায়ান্ট কো¤পানিতে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা তার। সেই ভাবনা থেকেই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বেছে নেওয়া।

মুঠোফোনে কথা হয় আদনান আহমেদ তামিমের সাথেও। শুরুতে তিনি মা-বাবার কষ্টের কথা স্বীকার করে বলেন, বেশির ভাগ সময় সকালের নাশতা আমি আম্মুর হাতে করতাম। খুব সকালে উঠে পড়া শুরু করতাম, খাওয়ার সময় পেতাম না। আম্মু তখন খাইয়ে দিত। আব্বু যথেষ্ট কষ্ট করেছেন। প্রবাসে থেকে উৎসাহ মোটিভেশন দিয়েছেন।

নিজের চেষ্টার বিষয়ে তামিম বলেন, নটর ডেম কলেজে সুযোগ পাওয়ার পর ২০২২ সালের প্রথম দিকে আমি ঢাকা চলে আসি। হোস্টেলে উঠি। হোস্টেলে এক রুমে চারজন ছিলাম। ওই খানে থাকা, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা হচ্ছিল। বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকতাম। তবে এই অসুস্থতাকে আমি পাত্তা দিতাম না। পড়ালেখায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করতাম। ঘুমানো, নামাজ, খাওয়া-দাওয়া বাদে বাকি সব সময় পড়ালেখা করতাম। চেষ্টা করতাম কোনো সময় যাতে নষ্ট না হয়। চট্টগ্রাম থেকে এসে দেশসেরা একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি। সবার আলাদা প্রত্যাশা ছিল। সেটা মাথায় রেখে পড়াশোনা করেছি।

আরও পড়ুন :  রাঙ্গুনিয়ার পোল শিক্ষিকা মালেকা দু‘বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর স. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!

তামিম বলেন, আমার প্রস্তুতি শুরু থেকেই ছিল বুয়েটকেন্দ্রিক। চেষ্টার ক্ষেত্রে কোনো আপস করিনি। পরীক্ষার হলে আতঙ্কিত হইনি। পরীক্ষার হলে আতঙ্কিত না হওয়াটাই আসল। নার্ভাস হলে জানা উত্তরও ভুল হয়ে যায়। অনলাইনে ক্লাস আর অফলাইনে পরীক্ষা দিয়েছি। ভর্তি পরীক্ষার সময়টাতে অনেক রাত জাগতাম। অনেক সময় সন্ধ্যায় পড়তে বসে, সকালে নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছি।

তামিম বলেন, সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য। আর হাল না ছাড়ার মানসিকতা। ভর্তি পরীক্ষার আগে অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। সব পরীক্ষা যে ভালো হবে, এমন কোনো কথা নেই। কিছু পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে, কিছু পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল হবে না। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। মাথা ঠান্ডা রেখে বুঝে বুঝে পড়তে হবে। মুখস্থ করা যাবে না। পাশাপাশি, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page