সোমবার- ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বসন্ত-ভালোবাসায় রঙিন চট্টগ্রাম

print news

বসন্ত-ভালোবাসায় রঙিন হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। রঙ ছুঁয়ে গেছে সব বয়সের মানুষকেই। সাথে ছুঁয়েছে ভালোবাসার রঙ। প্রতিবছরের মতো এবারও নানা আয়োজনে ঋতুরাজকে বরণ করছে বন্দরনগরীর আপামর মানুষ। যারা বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়কে ধারণ করেন হৃদয়ে।

বাংলার চিরায়ত গান, নাচ, আবৃত্তি, কথামালা সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম জুড়ে ফাগুনের প্রথম দিন জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ফাগুনের প্রথম সকালের সূর্যের আলো ফোটার পরেই একক আবৃত্তি ও সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে নগরীর লালদিঘী ময়দানে শুরু হয় বোধন আবৃত্তি পরিষদের বসন্ত বরণের আয়োজন।

লালদিঘীর ঐতিহাসিক ছয়দফা মঞ্চে বড় পরিসরে বোধনের এ আয়োজনের শুরুতে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি শিমুল নন্দী। শিল্পী রোজী সেনের সেতার বাদনের পর বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একক ও দলীয় আবৃত্তি, গান এবং নৃত্য পরিবেশিত হয়।

বোধন আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ স¤পাদক প্রণব চৌধুরী জানিয়েছেন, বিকেলে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি কথামালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এছাড়া একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারসহ বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নেবেন।

বসন্ত-ভালোবাসায় রঙিন চট্টগ্রাম

এদিকে বোধন আবৃত্তি পরিষদের আরেক অংশ বসন্ত বরণের আয়োজন করে নগরীর আমবাগান শেখ রাসেল পার্কে। সকালে দৈনিক আজাদী স¤পাদক এম এ মালেক উৎসবের উদ্বোধন করেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারও বসন্তের অনুভূতি তুলে ধরেন। বিপুল মানুষের সমাগম, বাসন্তী রঙে নিজেকে সাজিয়ে উৎসবে শামিল হওয়া তরুণ-তরুণীদের নাচ-গান ছায়াঘেরা শেখ রাসেল পার্কে অনন্য আমেজ তৈরি করে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিকেলে বসন্তের শোভাযাত্রা বের হবে।

সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে। সকালে দ্য ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের যন্ত্রীদের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর দলীয় আবৃত্তি, গান ও নাচ পরিবেশিত হয়। বিকেলে কথামালা পর্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়সহ বিশিষ্টজনেরা থাকবেন।

দিনব্যাপী এসব আয়োজনে সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, দ্য স্কুল অব ক্লাসিক্যাল অ্যান্ড ফোক ডান্স, কৃত্তিকা নৃত্যালয়, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, অদিতি. সঙ্গীত নিকেতন, নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি, ওডিসি অ্যান্ড ট্যাগর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, আলোড়ন ডান্স একাডেমি, সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমি, ঘুঙুর নৃত্যকলা একাডেমি, প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক অঙ্গন, নৃত্যনন্দন, নৃত্য নিকেতন, অভ্যুদয়, কালচারাল পার্ক, সঙ্গীত ভবন, অদিতি সঙ্গীত নিকেতন এবং উদীচী দলীয় বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে থাকছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে।

ফুলের দামের চাপে বসন্ত-ভালোবাসা!
বসন্ত-ভালোবাসায় রঙিন চট্টগ্রাম

বসন্ত-ভালোবাসায় চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ তৈরি হলেও ফুলের দামে চাপে পড়েছে উচ্ছ্বসিত তরুণ-তরুণী। ফলে সাধ্যের কারণে সাধ মিটাতে পারেনি অনেকে।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এমন তথ্য জানিয়েছেন অনেকে। ফুলের দাম কেমন জানতে চাইলে নগরীর চেরাগীতে ফুল কিনতে আসা ইন্ডিপেন্ডেট ইউনির্ভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌষিয়া জাহান নরিণ বলেন, দাম একটু বেশিই। তবে প্রিয়জনের জন্য এটা ম্যাটার করে না।

এবার ফুলের দাম অনেক বেশি। হাতের জন্য যে গাঁদা ফুলের মালা; সেটা আজকে কিনলাম ১০০ টাকা দিয়ে। এটা সাধারণত ৬০-৭০ টাকায় আগে কিনতাম। পহেলা ফালগুন আর ভালোবাসা দিবস যেহেতু একসাথে একটু বেশি খরচ না হয় হোক। বলছিলেন নরিণের সঙ্গে থাকা আরেক তরুণী বিলকিছ।

ফুল বিক্রেতা ফোরকান বললেন, একই দিনে ১৪ ফেব্রুয়ারি, বসন্ত উৎসব ও স্বরস্বতী পূজা। তাই চাহিদা বেশি, দামও বেশি। এছাড়া শীতের কারণে উত্তরবঙ্গে ফুল নষ্ট হয়েছে। আর গাড়ি প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পরিবহন খরচ বেড়েছে। মানুষ আগের মতো ফুলের প্রতি আকৃষ্ট নয় বলে লোকসান গুনার কথাও শুনিয়ে দিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগরীর চেরাগীর মোড়, কাজীর দেউড়ি, সিআরবি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রতিটি দোকানেই তোলা হয়েছে বেশি ফুল। দেশি-বিদেশি নানান রকম ফুল দিয়ে বোঝাই হয়েছে প্রতিটি দোকান। গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধ্যা, লিলি, গাঁদা, জিপসি, মাম, ক্যালেন্ডোলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। কেবল ফুল না, ফুল দিয়ে তৈরি মালা, মাথার ফুলের রিং, গাজরাও পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে।

চেরাগীর মোড়ে ১০০ গ্লাডিওলাস ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল ৩৪০-৪০০, বিভিন্ন রঙের গোলাপ ৫০০ থেকে ৭০০, রজনীগন্ধা প্রতিটি ২৫, বিভিন্ন জাতের রঙিন ফুল দিয়ে তৈরি একটি ফ্লাওয়ার বাস্কেট ৫০০, চন্দ্রমল্লিকা এক আঁটি ৭০-৮০, জিপসি এক আঁটি ৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

বসন্ত-ভালোবাসায় রঙিন চট্টগ্রাম

চেরাগীর মোড়ে ফুল বিক্রেতা নাসির হোসাইন বলেন, ‘কিছু কিছু মৌসুমী খুচরা বিক্রেতা বিভিন্ন বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে বাড়তি দামে ফুল বিক্রি করে। এসব দিনে ২০০ টাকার মাথার রিং বিক্রি করা হয় ২৭০-৪০০ টাকায়। একটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। পরে অবিক্রিত ফুল রাস্তায় ফেলবে।’

ফুল বিক্রেতারা বলছেন, সব থেকে দামি ফুলের কাতারে লিলি, বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত। আর কম দামে পাওয়া যাচ্ছে গোলাপ। ভালোবাসা দিবস ঘিরে সবচেয়ে বেশি লাল গোলাপের চাহিদা। পাশাপাশি রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, গাঁদা, জিনিয়া, ডালিয়া, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকা, এস্টার, লিলিয়াম, বোতাম ফুল, অর্কিড ফুল চলছে বসন্ত উৎসব ঘিরে।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা কম। ১৫ তারিখ চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এর প্রভাবে ফুল ব্যবসার মধ্যে কিছুটা মন্দা দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার বিকেল থেকে ফুলের চাহিদা কম থাকায় চেরাগীর অনেক বিক্রেতা লাভের আশা করছেন না। কেনা দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ কাঁচা ফুল সর্বোচ্চ তিন দিন পর্যন্ত রাখা সম্ভব হয়।’

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

error: Content is protected !!