বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪

কান উৎসবে উজ্জ্বল যেসব বাংলাদেশি তারকা

কান উৎসবে উজ্জ্বল যেসব বাংলাদেশি তারকা
print news

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদার আসর চলচ্চিত্র উৎসব প্রতি বছর বসে ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগর পাড়ের রিসোর্ট শহর কানে। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশ থেকে সিনেমা জমা দেওয়া হয় সেখানে। নির্বাচিত হয় কিছু সিনেমা। সেসব সিনেমা নিয়েই সংশ্লিষ্ট নির্মাতা ও অভিনেতারা যান কান চলচ্চিত্র উৎসবে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক নানা প্রসাধনী ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পণ্যদূতরাও কানের রেড কার্পেটে হাঁটেন। যেমন- ভারত থেকে লরিয়ালের পণ্যদূত হিসেবেই গেছেন ঐশ্বরিয়া ও অদিতি রাও হায়দারি। কানে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক তারকা খ্যাতিসম্পন্ন নায়ক-নায়িকার উপস্থিতি মেলে আবার এমন উৎসবের মতো বিশাল জমকালো আসরে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টায় থাকেন নিতান্ত সাধারণ স্তরের পারফর্মাররাও।

তাদেরই কেউ কেউ কান উৎসবে নিজের উদ্যোগে সেখানে যান। এতে করে তাকে সব খরচসহ অন্যান্য বিষয় নিজেকেই বহন করতে হয়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে কানে গিয়ে আলোচনায় আছেন আশনা হাবিব ভাবনা, আদনান আল রাজীব, মাকসুদা আখতার প্রিয়তি, সাদিয়া খালিদ ঋতি, নির্মাতা স্বপন আহমেদ। তাতে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে দেশে খ্যাতিমান সিনে তারকা থাকা সত্ত্বেও তারা কেন কানের মতো বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ আসরে যান?

সে যা হোক, প্রথমবার কান উৎসবে অংশ নিয়ে দারুণ আলো ছড়িয়েছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ভাবনা! নিজেকে সবার মাঝে পরিচিত করার জন্য পড়েছেন নজরকাড়া পোশাক।

এ প্রসঙ্গে ভাবনা বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষই আসলে ফ্রান্স হয়ে কান উৎসবে নিজেকে দেখতে চায়। অন্যদের মতো এটাও আমার একটা স্বপ্ন ছিল। সেটি এবার পূর্ণ হলো। তবে আরও একটি স্বপ্নের বীজ এখানে এসে বপন করলাম, সেটি হলো বৈশ্বিক সিনেমার এই উৎসবের মূল ক্যানভাসে নিজেকে আঁকতে চাই। আমি ছোট-বড় প্রত্যেক শিল্পীকে বলব, আপনারা নিজ আগ্রহ থেকে হলেও একবার আসুন এখানে।

আরও পড়ুন :  আইনজীবী না থাকায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি পিছিয়ে ২ জানুয়ারি

দেখে যান, পৃথিবীর চলচ্চিত্র কোথায়, কেমন আছে। সেই মানুষগুলো দেখতে কেমন। তাদের কাজের প্রক্রিয়া বা ধরন কেমন। আপনি যদি নিজেকে সিনেমা ও শিল্পের মানুষ মনে করেন, তাহলে এখানে আপনাকে আসতেই হবে। হতে পারে, শুরুতেই আপনি উৎসবের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাবেন না। কারণ শিল্পী হিসেবে কিংবা সিনেমার মানুষ হিসেবে আপনাকে তো প্রমাণ করতে হবে নিজেকে। তারপর ভিসা প্রক্রিয়া। তারপর কান সৈকতের দেখা। ফলে বিষয়টি অত সহজ নয়। সেক্ষেত্রে আমি ভাগ্যবান, প্রথমবারই শিল্পী হিসেবে কানের ভিসা পেয়েছি এবং প্রাণভরে উপভোগ করছি।’

এবারের কান উৎসবে নতুন আলোর মশাল হাতে নিয়ে সাগরপাড়ের শহরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ঢাকার জনপ্রিয় নির্মাতা আদনান আল রাজীব। উৎসবের প্রথম দিন থেকেই তিনি ফিলিপাইনের একটি বড় টিম নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রযোজক-পরিবেশক-নির্মাতা-শিল্পীদের সঙ্গে বৈঠক আর পিচিংয়ে মনোযোগী। এবারের উৎসবের সমান্তরাল বিভাগ ক্রিটিকস’ উইকের ৬৩তম আসরে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র র্’যাডিক্যালস’। এটি সহ-প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের দুই নির্মাতা আদনান আল রাজীব ও তানভীর হোসেন।

কানের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে রাজীব বললেন, ‘এর আগে আমার বুসানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে কানে যে এভাবে এত দ্রম্নত আসতে পারব, সেটা কল্পনাও করিনি। আমার মনে হয়, কো-প্রডিউসার হিসেবে এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা! যদিও আমার প্রেম কিংবা প্যাশনের জায়গা নির্মাতা হিসেবে। কিন্তু কো-প্রডিউসার হিসেবে আমি যে কাজ করছি, এখানে এসে যেভাবে একের পর এক মিটিং করছি, দেখছি, শিখছি এবং নিজের অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করছি, সেটা যেকোনো ফিল্মমেকারের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অসম্ভব দরকারি। সত্যি বলতে, এখন তো আমি এটাও বিশ্বাস করতে চাই, দ্রম্নতই এমন উৎসবে আমি নির্মাতা হিসেবে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে হাজির হব। সেই আত্মবিশ্বাস আমার মধ্যে জন্মেছে এখানে এসে।’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলে আসনের ৬২ গুণ ভর্তির আবেদন!

রাজীব জানান, গত কয়েক বছরে তিনি বেশ ক’টি সিনেমার স্ক্রিপ্ট ও পস্নট তৈরি করে রেখেছেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবে সেটি নিয়ে মাঠে নামা হয়নি। কান থেকে ফিরে এবার পুরোদস্তুর সিনেমা নিয়ে মাঠে নামার কথাও জানালেন এই নির্মাতা।

অন্তঃসত্ত্বা হয়েও ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হয়ে সবার নজর কেড়েছেন বাংলাদেশি মেয়ে ও সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড মাকসুদা আখতার প্রিয়তি। কানের লালগালিচায় হেঁটেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রিয়তি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আয়ারল্যান্ডের রিচার্ড হ্যারিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পক্ষ থেকে এবারও কানে এসেছি। সপ্তাহখানেক থাকব। এর মধ্যে বেশ কিছু ইভেন্ট অংশ নিতে হবে।’ মা হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আগস্ট মাসেই নতুন অতিথি পৃথিবীর আলো দেখবে। পেটে সন্তান ধারণ করে ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ায় এটি আমার জন্য আরও বিশেষ হয়ে গেছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ নির্বাচিত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল, অভিনেত্রী ও পাইলট মাকসুদা আখতার প্রিয়তি। এরপর আন্তর্জাতিক বহু প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশের কোনো নারী দ্বিতীয়বারের মতো উৎসবের সমান্তরাল বিভাগ ফিপরেসির অন্যতম জুরি (বিচারক) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। তিনি সাদিয়া খালিদ ঋতি। নির্মাতা নন, তিনি মূলত সিনেমা সমালোচক ও সাংবাদিক। কাজ করেন বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে। সেই ঋতি এর আগে ২০১৯ সালে ফিপরেসির আমন্ত্রণ পান। বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই তালিকায় নাম লেখান। ৫ বছর পর সেই ঋতিই আবার একই বিভাগের বিচারক হিসেবে ডাক পেলেন। এর মধ্যে শুরু করেছেন তার কান-কর্মকান্ড। রাত-দিন মাথা গুজে দেখছেন ফিপরেসিতে জমা পড়া ১৮টি ছবি।

আরও পড়ুন :  সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রত্যয় সেনাপ্রধানের

এদিকে বাংলাদেশের নির্মাতা স্বপন আহমেদ, যিনি ফরাসি নাগরিকও বটে। তিনি জানালেন, এবারের উৎসবে বাংলাদেশের মিটিমিটি বাতি আরও উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে। একদশক ধরেই তিনি এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন নানা পরিচয়ে। নির্মাতা স্বপন আহমেদ বললেন, ‘এবারের উৎসব জমেনি। জমার কথাও নয়। কারণ ফরাসি সরকারের পূর্ণ মনোযোগ এবার অলিম্পিক নিয়ে। অলিম্পিকে মন দিতে এবারের কান উৎসবের বাজেট কমানো হয়েছে প্রায় তিন গুণ। ফলে উৎসব জমে ওঠার মতো যে বৈশ্বিক তারকা কিংবা পরিকল্পনা প্রয়োজন, সেসব এবার উৎসব কর্তৃপক্ষ করতে পারেনি বলেই আমার মনে হচ্ছে।

তবে আশার কথা এবার কিন্তু বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে। ক্রিটিকস’ উইকে আমাদের দুই কো-প্রডিউসার এবং ফিপরেসিতে একজন বিচারক আছেন আমাদের। এর বাইরে আরও অনেকেই এসেছেন এবার। এই সংখ্যা আরও বাড়বে সামনে, সেই আলোর আভাস দেখতে পাচ্ছি।’

কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ থেকে সচরাচর সিনেমা নির্বাচিত হয় না। ২০০২ সালে তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ প্রদর্শিত হয়েছিল কানে। এটি ফিপ্রেসকি আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কার পায়। সিনেমাটি প্রাথমিকভাবে ফরাসি অর্থায়নে নির্মিত। ২০২১ সালে আবদুলস্নাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রদর্শিত হয়েছিল ‘আ সার্তে রিগা’ বিভাগে। সেখানে সিনেমাটি স্ট্যান্ডিং অভেশন পেয়েছিল।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page