মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

এভারেস্টের পর বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় বাবর আলীর

এভারেস্টের পর বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় বাবর আলীর
print news

ঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে রোববার বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বয়সী চট্টগ্রামের বাবর আলী। এর দু‘দিন পর পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করলেন তিনি।

মঙ্গলবার (২১ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫ মিনিটে লোৎসের চূড়ায় পৌঁছান তিনি। বাবর আলীর লোৎসে জয়ের খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান।

তিনি বলেন, নেপাল সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে ও বাংলাদেশ সময় ৬টা ৫ মিনিটে বাবর আলী লোৎসে পর্বতচূড়ায় ওঠেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে বাবর আলীই প্রথম ব্যক্তি যিনি একই অভিযানে দুটি আট হাজার মিটার পর্বত সামিট করেছেন। এই লক্ষ্য পূরণ করে বাবার আলী নতুন রেকর্ড গড়লেন।

বাবর আলী সুস্থ আছেন জানিয়ে ফরহান জামান বলেন, নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামের ট্রেকিং ও পর্বতাভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানে যান বাবর। তার সঙ্গে আছেন শেরপা বীর বাহাদুর তামাং। লোৎসের চুড়া থেকে তিনি রওনা দিয়ে ক্যা¤প-৪ এ এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করছি। লোৎসের উচ্চতা ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট।

এর আগে গত রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টায় পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান বাবর আলী। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ২৯ হাজার ৩১ ফুট।

বাবরের সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স নিজেদের ফেসবুক পেজে লোৎসে পর্বতজয়ের তথ্য জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে আজ লিখিত হলো অভূতপূর্ব ও রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়। আর লেখক আমাদের স্বপ্ন সারথি-বাবর আলী। এটিই এই বাংলাদেশের কোনো সন্তানের প্রথম লোৎসে সামিট এবং প্রথম একই অভিযানে দুইটি ৮ হাজারি শৃঙ্গ সামিট। বাবর বেসক্যা¤েপ পৌঁছালেই হবে মূল উৎসব।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

সংগঠনটির তথ্যমতে, গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা হন বাবর আলী। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান লুকলা বিমানবন্দরে। এরপর পথচলা শুরু করেন এভারেস্ট বেজক্যা¤েপর উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছান ১০ এপ্রিল। উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেজক্যা¤প থেকে একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করেছেন বাবর। ২৬ এপ্রিল এভারেস্টের ক্যা¤প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব সমাপ্ত করেন। এরপর অনুকূল আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যা¤প থেকে শীর্ষ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন বাবর আলী। ১৫ মে সকালে পৌঁছে যান ক্যা¤প ২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর উঠে যান ক্যা¤প ৩-এ। সেখান থেকে ১৮ মে পৌঁছান ক্যা¤প ৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যা¤েপর ওপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন।

১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা। ১৯ মে ভোরের প্রথম কিরণে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা। এরপর তারা নেমে আসেন ক্যা¤প ৪-এ। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে ২০ মে মধ্যরাতে লোৎসে চূড়ার উদ্দেশ্যে পথ ধরেন। মঙ্গলবার সকালে সফলভাবে সেখানে পৌঁছান।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগের দিন ৩১ মার্চ চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের ইচ্ছার কথা জানান বাবর আলী। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, বেশির ভাগ পর্বতারোহীই বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিন্দুতে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখার স্বপ্ন দেখেন। আমিও দেখছি। আমি চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। তাই এবার এভারস্টের সঙ্গে লোৎস জয় করার স্বপ্ন দেখছি। পুরো অভিযানে সময় লাগবে দুই মাস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মে মাসের ৩য় সপ্তাহ কিংবা শেষ সপ্তাহে চূড়ায় আরোহণ করতে পারি।

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত ২৯ হাজার ২৮ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টে অভিযান নিঃসন্দেহে দুরূহ একটা কাজ। একই অভিযানে ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট লোৎসে আরোহণের প্রচেষ্টাকে করেছে আরও চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ থেকে আগে এভারেস্ট জয় করা হলেও একই অভিযানে এভারেস্ট এবং লোৎসে আরোহণের চেষ্টা হয়নি। সেই চ্যালেঞ্জই নিতে বেশ কয়েক বছর ধরে নিজেকে হিমালয়ের নানান চূড়ায় অভিযানের জন্য প্রস্তুত করেন বাবর।

২০১৪ সাল থেকে তার পর্বতারোহণে পথচলা শুরু। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। এ ক্লাবের হয়েই গত দশ বছরে হিমালয়ের নানান শিখরে অভিযান করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে ভারতের উত্তরকাশীর নেহেরু ইন্সটিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ স¤পন্ন করেন। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম (২২,৩৪৯ ফুট) আরোহণ করেন বাবর।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের লিয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার বেগম দ¤পতির দ্বিতীয় সন্তান বাবর আলী। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজে তার সুনাম রয়েছে। করোনায় তার ভূমিকাও বেশ প্রশংসার ছিল। সব কিছুকে পিছনে রেখে পাহাড় প্রেমী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. বাবর আলী। ফেইসবুকে তিনি নিজের পরিচয় দেন পেশায় ডাক্তার, নেশায় পাহাড়ি হিসেবে।

এভারেস্ট জয়ের আগে বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন বাবর। তার মধ্যে রয়েছে সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) অন্যতম।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!