শনিবার- ২২ মার্চ, ২০২৫

এলার্জি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে

এলার্জি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে
print news

লার্জি জনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে। নগরী ও জেলার প্রতিটি ঘরে এক বা একাধিক মানুষ এলার্জি জনিত ঘা নিয়ে দু:সহ জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে শিশু-কিশোরের সংখ্যা বেশি। চিকিৎসকদের নিকট শরনাপন্ন হয়েও এ রোগ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। 

এমন তথ্য জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। ২৬ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মনছুর আলমের চেম্বারে চিৎিসা নিতে আসেন দেড়শতাধিক এলার্জি জনিত রোগী। যারা প্রতিনিয়ত হাত দিয়ে শরীরের চারপাশ চুলকাচ্ছেন।

এর মধ্যে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে আসা শারমিন রাফি নামে এক কিশোরী জানায়, সে নগরীর ‍সিটি করপোরেশনের একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। গত ১৪-১৫ দিন আগে সে এলার্জি জনিত রোগে আক্রান্ত হয়। শুরুতে শরীরের হাত-পা ও পিঠে ঠোসা উঠে। পড়ে তা ফেটে ঘা হয়ে যায়। যেখানে শুধু চুলকায়। আর জ্বালা যন্ত্রণা করে।

শুধু সে নই, তার মা ও ভাইসহ পরিবারের ৫ সদস্যের সবাই এই এলার্জি জনিত রোগে আক্রান্ত। এমনকি তাদের আত্নীয়-স্বজন ও আশপাশের পরিচিত পরিবারের সবাই এ রোগে আক্রান্ত বলে জানায় শারমিন রাফি।

একই কথা জানায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শওকত মামুন। তার ভাষ্য, আমি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। গত ১৫-২০ দিন ধরে আমি এলার্জি জনিত রোগে ভুগছি। অসহ্য যন্ত্রণা সইতে না পেরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি।

শওকত মামুনের বক্তব্য, শুধু আমি নই, আমাদের কলেজের ৬ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর সবাই এলার্জি জনিত ঘা রোগে আক্রান্ত। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক কষ্ঠ করে এখন প্রাকনির্বাচনী পরীক্ষা দিচ্ছে। অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

ভুক্তভোগীদের ধারণা, করোনা টিকা নেওয়ার ফলে তারা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরীর প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেম্বারে প্রতিদিন এলার্জি জনিত রোগীর ভীড় করছে। সেখানেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। চিকিৎসকরা সময়মতো চেম্বারে না আসায় রোগীরা একেকজন ৫-৬ ঘন্টা ধরে হাসপাতালে বসে থাকছে। আবার রোগীর সহকারীরাও ২০০-৩০০ টাকা উপরি নিয়ে সিরিয়াল দিচ্ছে।

এদিকে করোনার টিকা নেওয়ার ফলে এলার্জি আক্রান্ত হচ্ছে এমন কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এলার্জি কমে বা বাড়ে। এ বছরের মাঝখানে একটু বেশি গরম পড়েছিল এটার কারনে জনস্বাস্থ্যে এলার্জি কিছুটা বেড়েছে। এটা করোনার সাথে সম্পর্কিত না ।

তিনি বলেন, সারা বছরের তুলনায় জুন, জুলাই , আগস্ট, সেপ্টেম্বরের দিকে এলার্জির প্রভাব একটু বেশি থাকে। আবার শীতকালে কিছুটা কমে যায়। তবে এসব বিষয় নিয়ে মেডিকেল কলেজ গুলোতে সবসময় রিসার্চ চলমান থাকে। নতুন কোন তথ্য পেলে সেটা আমরা সবাইকে জানিয়ে দিই।

তিনি আরো বলেন, স্ক্যাবিসটা মূলত ক্লোজ কন্টাক্টের কারনে হয়ে থাকে। বিশেষ করে একই বিচানায় থাকার ফলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নিদিষ্ট ডোজের ওষুধ খেতে হবে। এছাড়া বিচানার চাদর, বালিশ, জামা-কাপড় যতটা সম্ভব রোদের মধ্যে শুকাতে হবে। এতেই কিছুটা কমে আসবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, স্ক্যাবিস ও ফাঙ্গাস দুই ধরণের চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। স্ক্যাবিস হলে সারা শরীর চুলকাতে থাকে। আঙুলের ফাঁকে, নিতম্বে, যৌনাঙ্গে, হাতের তালুতে, কব্জি, বগল, নাভি ও কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয়। পরে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। রাতে চুলকানি বেশি হয়ে থাকে। ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে, যা খুব চুলকায় এবং তা থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বের হতে পারে। একই বিছানায় থাকার ফলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়। ফাঙ্গাস সাধারণত হাইজিন থেকে হয়ে থাকে। বিশেষ করে গরমকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ঘাটতি হলে এ রোগ বেশি হয়। দুই সপ্তাহের নিয়মিত চিকিৎসায় এ রোগ নিরাময়যোগ্য।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে চিকিসা নিতে আসা আতাউর রহমান কায়সার জানান, প্রথমে চুলকানি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর নিকটস্থ ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খান পরে আরো বেড়ে যাওয়ায় চমেক হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রথমে নিজে আক্রান্ত হলেও এখন পরিবারের সবাই আক্রান্ত বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বহিবিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইসরাত জাহান বলেন, চট্টগ্রামে স্ক্যাবিস ও ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ছোঁয়াচে রোগ হওয়ার কারনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সবাই করোনা টিকা নেওয়ার ফলে এলার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা বললেও আমাদের কাছে এটার সুনিদিষ্ট তথ্য নেই। আর এটা রিসার্চের বিষয়। রিসার্চ ছাড়া তো বলা যাবে না। এলার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ইকোনোমিক কন্ডিশনটাও জড়িত। পরিস্কার পরিছন্নতা ও হাইজিন মেনটেইন করার মাধ্যমে বিস্তার কিছুটা রোধ করা যায়।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page