বৃহস্পতিবার- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রাম ওয়াসা

কমিশন ছাড়া মেলে না প্রকল্প কাজের চেক!

ঠিকাদারদের অভিযোগ

print news

চট্টগ্রাম ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের চুক্তিমূল্য অনুসারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন দাবি ও নানাভাবে তাদেরকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু শাফায়াত মো. শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে গত ১১ এপ্রিল ওয়াসার এমডি এ কে এম ফয়জুল্লাহর কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা ঠিকাদার সমিতি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার ঠিকাদাররা বিভিন্ন প্রকল্পে অংশ নিয়ে পানি সরবরাহ ও পানি উৎপাদনে সহযোগিতা করে আসছে। পাশাপাশি এনআরডব্লিউ কম রাখতে ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের পাইপ লাইন মেরামত, চুনা ও ক্যামিকেল সরবরাহ, প্লান্টে এলার্মসহ নানাভাবে কাজ করে আসছেন তারা।

কিন্তু ঠিকাদারদের কাজের বিল হিসাব শাখায় আনার পর চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। তার দপ্তর থেকে প্রতিটি ফাইল ছাড়িয়ে নিতে কমপক্ষে ৫-৬ দিন সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এসব বিষয়ে ঠিকাদার সমিতি বারবার তার দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো প্রকার প্রতিকার মেলেনি। অবশেষে বাধ্য হয়ে তারা ওয়াসার এমডির কাছে নালিশ করেছেন।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু শাফায়াত মো. শাহেদুল ইসলাম ঠিকাদারদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন এবং চুক্তিমূল্য অনুসারে অনৈতিকভাবে কমিশন দাবি করেন। তার চাহিদা মতো সুবিধা দিতে ব্যর্থ হলে তিনি ফাইল নিয়ে ঘোরান। অনেক সময় বিলের ফাইলে সই করলেও চেকে স্বাক্ষর না করে হয়রানি করেন। এমনকি একটি চেক স্বাক্ষর করতে এক সপ্তাহ সময় নিয়েছেন আবু শাফায়াত মো. শাহেদুল ইসলাম, এমন নজিরও রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ঠিকাদার সমিতি দিয়েছিল। কিন্তু সেটিরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

ঠিকাদার সমিতির দেওয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের সিডিউল দর অনেক পুরাতন। বর্তমানে ওই দরের সাথে বাজারের দরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তার উপর এসব বাড়তি খরচ মিটানো খুব বেশি চাপের। অনেক সময় তাদেরকে লোকসান দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। উপরন্তু হয়রানির শিকার হয়ে অনেক ঠিকাদার ক্ষুব্ধ হয়ে বাৎসরিক কাজ বন্ধ করে দিতে চান। চট্টগ্রাম ওয়াসা ঠিকাদার সমিতি তাদেরকে মানিয়ে রেখেছে।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মির্জা মোহাম্মদ মনসুরুল হক বলেন, ‘আমরা এমডি স্যারের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা প্রেস কনফারেন্স করব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু শাফায়াত মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করিনি এবং দাবিও করিনি। তাছাড়া চেক ও বিল দিতে বিলম্বের কারণ হচ্ছে, এগুলো যাচাই-বাছাই করতে হয়। এজন্য সময় লাগে।’

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের কাজে ঠিকাদার বা অন্য কেউ অনিয়ম করলে সেটার দায় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের ওপর স্বাভাবিকভাবে আসে না; এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব অন্য কর্মকর্তাদের। এরপরও চেক ও বিল দিতে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক গড়িমসির অভিযোগ, ঠিকাদারদের অভিযোগকেই ভিত্তি দেয়।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, আমি ঠিকাদারদের অভিযোগটি পেয়েছি। ওয়াসার সচিবকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমিশন ছাড়া ঠিকাদারদের চেক না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এসব বিষয় আমার কাছে আসবে সবার শেষে। এসব বিষয় বোর্ডে তোলা হলে জানতে পারব।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘একদিকে চট্টগ্রাম নগর জুড়ে পানির জন্য হাহাকার চলছে। অন্যদিকে ওয়াসার কিছু কর্মকর্তা ব্যস্ত অনিয়ম-দুর্নীতিতে। এসব অভিযোগ গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। তদন্তের ক্ষেত্রে ওয়াসার কর্মকর্তারা যেন যুক্ত না থাকেন, এ ধরনের তদন্ত ওয়াসার বাইরের কর্মকর্তা ও দুদক দিয়ে করানোর দাবি জানাচ্ছি। সূত্র : একুশে পত্রিকা

আরও পড়ুন

No more posts to show