
রাজশাহীগামী বাসে দুই নারীকে ধর্ষণ ও রংপুরের মিঠাপুকুরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এতে সংগঠকরা ধর্ষকদের জনসম্মুখে প্রকাশ্যে বিচারের দাবি তুলেছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক চৌধুরী সিয়াম এলাহী বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের কথা বলছি না, যে কোনো সরকার যদি ভবিষ্যতে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে ছাত্র-জনতা ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করবে। ছাত্র-জনতাই ধর্ষককে শাস্তি দেবে।
তিনি বলেন, একজন ধর্ষকের শাস্তি হতে হবে জনসম্মুখে, গোপনে নয়। গোপনে বিচার করে ফাঁসি দেওয়া হয়, এটা হতে পারবে না, তার বিচার করতে হবে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে। এটা করতে পারলে একজন ধর্ষককে দেখে হাজার ধর্ষকের বুক কাঁপতে শুরু করবে।
আরেক সংগঠক রিদওয়ান সিদ্দিকী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের আমলে দেখেছি, যখনই কোনো চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, সেটা ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হত। কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হলেও বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের কারণে তাদের জামিন দিয়ে দেওয়া হত। অপরাধীদের মুক্তি দিয়ে দেওয়া হত। সেই যে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর প্রচলন শুরু হয়, সেটার জন্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
সরকারকে বলব, অপরাধ বড় হোক আর ছোট হোক, তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। গ্রেফতার-গ্রেফতার নাটক না করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করুন। বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করুন। অপরাধীদের এমন বিচার করা হোক, যাতে এদেশে আর কেউ ধর্ষণের সাহস না করে, কোনো ধরনের অপরাধ করার সাহস না করে।
সংগঠক নীলা আফরোজ বলেন, আমার নিজের নিরাপত্তা চাই, মা-বোনের, সহকর্মীর নিরাপত্তা চাই। আমরা দেশকে একটি নারীদের জন্য একটি নিরাপদ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আমরা সবাই মিলে নারীর জন্য একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলি।
এদিকে এন্টি রেপ ইউনিটি, চিটাগং নামে একটি সংগঠন ধর্ষণের বিচারের দাবিতে নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলসের আমরি ট্রাভেলসের চলন্ত একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় তিন ঘণ্টা ধওে ডাকাতি ছাড়াও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন যাত্রীরা। ডাকাতির ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করে পুলিশ। ৫৪ ধারায় আদালতে তোলা হলে তারা জামিনে মুক্তি পান।
ঘটনার ৫ দিন পর শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, নারীদের কাছ থেকে কিছু স্বর্ণ-রূপা লুণ্ঠিত হয়েছে। দুষ্কৃতকারী ডাকাত দল নাকফুল কানের দুল নেওয়ার সময় নারীদের টাচে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি এটা আমরা জানতে পেরেছি। শ্লীলতাহানি বলা যেতে পরে। তবে গ্রেফতার তিনজনই আন্তঃজেলার ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তিনজনই প্রাথমিকভাবে অপরাধ স্বীকার করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে দ্রুত।