বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

কোটা বাতিলের দাবিতে এবার চট্টগ্রাম মহানগরে সড়ক অবরোধ

কোটা বাতিলের দাবিতে এবার চট্টগ্রাম মহানগরে সড়ক অবরোধ
print news

কোটা বাতিলের দাবিতে এবার চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ততম কালুরঘাট-পতেঙ্গা বিমান বন্দর সড়ক অবরোধ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে কোন কাজ হয়নি।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা ভেঙে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গিয়ে নগরীর দুই নম্বর গেইটের গোলচত্ত্বরে অবস্থান নেন। সেখানে কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবি না মানলে আন্দোলন আরো জোরালো করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেধা থাকার পরও যোগ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূলত আমরা সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা প্রত্যাহার করা জন্য এই আন্দোলন করে যাচ্ছি।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটলে করে শিক্ষার্থীরা ষোলশহর নামেন। সেখান থেকেই কোটা বাতিলের দাবি তুলে তারা বিভিন্নরকম ¯ে¬াগান দিতে দিতে সড়কের নেমে আসে। পুলিশ একপর্যায়ে তাদেরকে স্টেশন থেকে সড়কে নামতে না দিলে তারা পুলিশের বাধা ভেঙে সড়কে নেমে আসেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে সড়কে এক পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যহত হওয়ায় বাড়ে যানজটও। তবে যেকোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানও দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এতে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ঘন্টাখানেকের মধ্যে যানজট কমে আসে। শিক্ষার্থীদের অবস্থান শান্তিপূর্ণ ছিল বলে জানান তিনি।

ঈশান/মখ/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page