শুক্রবার- ১৪ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে হচ্ছে নগরের প্রথম আন্ডারপাস

নির্মাণ ব্যয় ১২ কোটি টাকা, ডিজাইনও শেষ

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে হচ্ছে নগরের প্রথম আন্ডারপাস
print news

থচারী পারাপারের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম মহানগরের বহাদ্দারহাট মোড়ে হচ্ছে প্রথম আন্ডারপাস। আরাকান সড়কের নিচ দিয়ে পথচারী পারাপারের এই পথ বা আন্ডারপাসটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।

বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের সামনে একটি এবং এর সোজা আরাকান সড়কের উত্তর পাশে আরেকটি প্রবেশপথ থাকবে আন্ডারপাসটির। দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এর নকশা প্রণয়ন শেষ হয়েছে। আন্ডারপাসটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে দরপত্রও আহŸান করেছে চসিক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, বহদ্দারহাট খুব গুরুত্বপূর্ণ মোড়। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের জমায়েত হয় সেখানে। তো প্রচুর গাড়িও আসা-যাওয়া করে। তাই লোকজন রাস্তা পারাপার করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। লোকজন স্বাচ্ছ্যন্দ্যে ও নির্ভয়ে রাস্তা পার হতে পারে না। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ যাতে খুব সহজে রাস্তা পার হতে পারে তাই আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নিই।

মেয়র বলেন, বহদ্দারহাট মোড়ে প্রথমে ফুটওভার ব্রিজ করার চিন্তা-ভাবনা ছিল। কিন্তু সেখানে ফ্লাইওভারের উচ্চতা খুব নিচু হয়ে গেছে। এর নিচে ফুটওভার ব্রিজ করলে উঁচু গাড়ি চলাচলে সমস্যা হতে পারে। আবার আন্ডারপাসে কিছু হকারকেও বসার ব্যবস্থা করব, বিদেশে কিন্তু সেভাবেই করে। পথচারীর পারাপারের জন্য এটিই কিন্তু প্রথম আন্ডারপাস হবে চট্টগ্রামে। আন্ডারপাসটি হলে সড়কের উপর যে সৌন্দর্য সেটি ঠিক থাকবে। তাছাড়া সেখানে সড়ক ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের শৃঙ্খলাও আসবে।

নকশা প্রণয়নকারী কনসালটেন্ট ফার্ম ডিপিএম সূত্রে জানা গেছে, আন্ডারপাসটি হবে ৪১ দশমিক ২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার প্রশস্ত। এর উচ্চতা ৪ মিটার। দুই প্রবেশ মুখে একটি করে দুইটি সিঁড়ি থাকবে। থাকবে একটি করে দুইটি স্কেলেটরও (চলন্ত সিঁড়ি)। আন্ডারপাসের ভেতর হকার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুইপাশে ১০টি করে ২০টি দোকান নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি দোকানের জন্য আন্ডারপাসের ২ দশমিক ৭৫ মিটার জায়গা লাগবে। এসব দোকান বাদ দিলে মাঝখানে সাড়ে ৪ মিটার বা প্রায় ১৫ ফুট জায়গা থাকবে মানুষের হাঁটার জন্য।

এছাড়া জলাবদ্ধতায় পানি প্রবেশরোধে আন্ডারপাসের প্রবেশমুখ হবে ক্যানোপি আকৃতির। কোনো কারণে পানি প্রবেশ করলে তা নিষ্কাশনে থাকবে দুইটি পা¤প। এছাড়া পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে এবং বেশ কয়েকটি এডযাস্ট ফ্যানও থাকবে ভেতরে।

ডিপিএম এর কোয়ালিটি অ্যান্ড কোয়ানটিটি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর আলী মামুন বলেন, শুধু মানুষজন পারাপার হবে এই আন্ডারপাসে। কোনো গাড়ি পারাপার হবে না। আমরা যে স্টাডি করেছি তাতে দেখেছি প্রতি ঘণ্টায় গড়ে হাজারের বেশি লোক রাস্তা পারাপার করে বহদ্দারহাটে। পিক আওয়ারে সেটি আরো বেশি। বিপুল সংখ্যক যে মানুষ রাস্তা পার হন তাদের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। আন্ডারপাস হলে সেটি আর থাকবে না। আধুনিক সব সুবিধা থাকবে আন্ডারপাসে। রাস্তা পার হতে গিয়ে বয়স্ক এবং অসুস্থদের সমস্যা হয়। স্কেলেটর থাকায় সে সমস্যাও হবে না।

জলাবদ্ধতা হলে আন্ডারপাসে পানি প্রবেশ করবে কী না জানতে চাইলে বলেন, করবে না। পানি প্রবেশ না করে মতই ডিজাইন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই প্রবেশমুখে ক্যানোপি থাকবে। ক্যানোপির ফলে পানি ঢুকতে পারবে না। এটা ফ্ল্যাড লেবেল থেকে অনেক উঁচু হবে। মূল সড়কের পাশে যে ফুটপাত তার চেয়ে আরো দুই ফুট উঁচু হবে সেটি। এরপরও যদি কোনো কারণে পানি প্রবেশ করে তা নিষ্কাশনে দুইটি পা¤প থাকবে সেখানে।

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশিকুল ইসলাম বলেন, বহদ্দারহাট মোড়ে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে এক হাজারের বেশি লোক রাস্তা পারাপার করেন। কয়েকটি সড়কের সংযোগ থাকায় এ মোড়ে গাড়ির চাপও থাকে বেশি। ফলে রাস্তা পারাপারকারীদের সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। মহিলা, শিশু এবং বয়স্কদের এ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় পথচারীদের আহত হওয়ারও খবর রয়েছে। এ অবস্থায় আন্ডারপাস নির্মাণ হলে দুর্ঘটনা এড়িয়ে নির্বিঘেœ রাস্তা পারাপার করতে পারবেন পথচারীরা।

তিনি বলেন, বহদ্দারহাটের আন্ডারপাসটি হবে বাংলাদেশের প্রথম স্কেলেটরযুক্ত আন্ডারপাস। মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করার সুবিধা থাকবে এখানে। প্রতিবন্ধী, শিশু এবং বয়স্কদের সুবিধার্থে স্কেলেটর দেয়া হচ্ছে। এই আন্ডারপাস হবে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে। আন্ডারপাস নির্মাণ হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন। গত ২৮ এপ্রিল আন্ডারপাসের জন্য দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। আগামী ২৭ মে দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।

আন্ডারপাস সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, বহদ্দারহাট মোড় খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে আন্ডাপাস হলে খুব ভালো হবে। আন্ডারপাসের ডিজাইন যদি খুব প্রপারলি (সঠিকভাবে) হয় বা ব্যবহারকারীদের জন্য এটা স্বাচ্ছন্দ্যময় করে ডিজাইন করে সেটা খুব উপযুক্ত হবে। যদি এটা নিরাপদ ও পরিষ্কার রাখা যায় তাহলে আন্ডারপাস খুব কার্যকরী হবে বলে মনে করি।

আন্ডারপাসে দোকান দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুয়েকটা দোকান থাকলে পথচারীর নিরাপত্তাহীনতাও দূর হবে। ঢাকার গুলিস্তানের আন্ডারপাসেও দোকানপাটের ব্যবস্থা আছে। সেখানে হকার বসলেও তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।

ঈশান/মখ/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page