
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে নেমেছে সারাদেশের নৌযান শ্রমিকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কর্মবিরতির পালন করলেও বন্ধের দিন হওয়ায় বিষয়টি জানাজানি হয় বিকেলে। এ দিন কর্মবিরতিতে তেমন কোন প্রভাব না পড়লেও শনিবার থেকে পণ্যের দামের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে মন্তব্য করছেন আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এবিসি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আরিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে পণ্য খালাসে ব্যাঘাত ঘটবে এটা স্বাভাবিক। এতে আমদানিকারকদের বাড়তি ব্যয়ও করতে হবে। মানুষের সৃষ্ট কোনো সমস্যার কারণে যদি সেটা হয় তা মানা যায় না।
বাংলাদেশ ফুডস্টাফ ই¤ের্পাটারস এন্ড সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশসের সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসাইন সুজন বলেন, যখন কোনো পণ্য জাহাজে অতিরিক্ত সময় থাকবে বা খালাসে অতিরিক্ত সময় লাগবে তার জরিমানা বা বাড়তি ব্যয় আমাদের বহন করতে হয়। সরকারও এক্ষেত্রে আমাদের দায়ী করে থাকে।
তবে শুক্রবার হিসেবে পণ্য খালাসে বা নৌযানে তেমন একটা কাজ থাকে না। ফলে এর প্রভাব পড়বে না। তবে যদি কর্মবিরতি চলতে থাকে আমদানিকারকদের বাড়তি ব্যয় গুনতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের লোকসান হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ জিনিসের দামে এর প্রভাব পড়বেই।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরের সদরঘাট ও মাঝিরঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌযান থাকলেও জেটি এলাকায় কোন শ্রমিক নেই। তবে মহিদুল ইসলাম নামে একজন শ্রমিক বলেন, আমাদের সমিতি থেকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেছে। আমরা সমিতির কথা অনুযায়ী সবকিছু গুছিয়ে কাজ ছেড়ে চলে আসছি। যখন কাজ শুরু করার ডাক দিবে তখন সবাই কাজে যাব।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের অফিস সচিব মো. আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, চাঁদপুরের হরিনা ঘাটের কাছে মাঝেরচর এলাকায় জাহাজে সাত খুনের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের বিচারসহ আরও কিছু দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
তিনি বলেন, শুক্রবার তো এমনিতেই বন্ধ। আমরা বন্ধের দিন কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি যেন পণ্যের দামে প্রভাব না পড়ে। যেহেতু এখানে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে, বিষয়টি সরকারের ভাবা দরকার। আমরা কর্মবিরতি করছি আমাদের দাবি আদায়ের জন্য। সরকারের যা করার দরকার সেটা তারা করবে। সেটা তো আমরা করতে পারি না।
এ নিয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছি। সারাদেশে আমাদের ১০ হাজার ছোট-বড় পণ্যবাহী নৌযান ও লক্ষাধিক শ্রমিক রয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের কাজে ফেরানো সম্ভব না। তাই আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের ডিজি (মহাপরিচালক) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। উনি রবিবার আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসার প্রস্তাব দেন। আর মিটিং না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সেটা কি সম্ভব! আমরা সরকারের সঙ্গে না বসা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে দুইদিন পর মিটিংয়ে বসতে রাজি না।