
#প্রথম ফ্লাইট ৩ মে, পরিচালিত হবে ১৭টি ফ্লাইট
চট্টগ্রাম থেকে ক্রমাগতভাবে কমছে হজযাত্রীর সংখ্যা। গত তিন বছরে এই সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। চলতি বছর চট্টগ্রাম থেকে ৭ হাজার ১০০ হজযাত্রীর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাও পূরণ হবে কিনা এখনো সংশয় রয়েছে।
ব্যয় বাড়ায় এ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বলে জানান হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনাল কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরীয়ত উল্লাহ সহীদ। রবিবার (২৭ এপৃল) বিকেলে এ প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।
এদিকে হজযাত্রী কমে যাওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও চট্টগ্রাম থেকে হজ ফ্লাইট কমিয়ে আনছে বলে জানান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের ম্যানেজার আল মামুন ফারুক।
তিনি বলেন, গত বছর চট্টগ্রাম থেকে ২২টি ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০টি ফ্লাইট গিয়েছিল জেদ্দায় ও দুটি মদিনায়। এবার চট্টগ্রাম থেকে ১৭টি হজ ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ১৪টি ফ্লাইট যাবে জেদ্দায়, তিনটি ফ্লাইট মদিনায়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিবছরের মতো এবারও এককভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ফ্লাইট পরিচালনার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি স¤পন্ন করা হয়েছে। আগামী ৩ মে ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে প্রথম ফ্লাইট যাবে মদিনায়। পরবর্তী ফ্লাইটগুলোরও সিডিউল দেয়া হয়েছে। এবার চট্টগ্রাম থেকে বিমান প্রায় সাত হাজার হজযাত্রী পরিবহন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
হাবের চট্টগ্রাম জোনাল কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরীয়ত উল্লাহ সহীদ বলেন, ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম থেকে ৮ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে হজ পালনে গিয়েছিলেন ১০ হাজারের কিছু বেশি। ২০২২ গিয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার। এবার এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের কিছু বেশি হজযাত্রী হজে যাওয়ার আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি স¤পন্ন করেছেন। অথচ এবার চট্টগ্রাম থেকে সর্বনিম্ন ৭ হাজার ১০০ হজযাত্রীর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাও পূরণ হবে কিনা এখনো সংশয় রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম জোনের সেক্রেটারি মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, গতবারের চেয়ে এবার হজযাত্রী কমেছে অন্ততঃ পঁচিশ শতাংশ। তিন বছরে কমেছে প্রায় অর্ধেক। এবার হজযাত্রীর যে টার্গেট তাও পূরণ হবে না। এরজন্য খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন তিনি।
হাব ও আটাবের নেতাদের ভাষ্য, বছর দশেক আগেও লাখ দেড়েক টাকার মধ্যে হজ পালন করে আসা সম্ভব হত। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে তা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। বর্তমানে একজন মানুষের হজ করে ঘরে ফিরতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাগছে।
২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি প্যাকেজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় (মসজিদুল হারামের আশপাশের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি ) ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। অপর প্যাকেজে (মসজিদুল হারামের আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা।
আর বেসরকারিভাবে সাধারণ প্যাকেজে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। দুই সিটের রুম বা হারাম শরীফের কাছাকাছি অবস্থানের সুবিধা বা সেবা নিতে টাকার পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে ১০ লাখের কাছাকাছি ঠেকবে।
হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে আবাসন ও খাবার খরচ, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ডলার ও সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার বাড়া ও খরচ বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ বলে হজ এজেন্সিগুলো জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৪ জুন সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজ পালনের সুযোগ পাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন যেতে পারবেন।
হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ, ভিসা, টিকিট ও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। এজন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। মক্কা-মদিনায় হারাম শরীফ থেকে হোটেল দূরে কিংবা কাছে, ভালো হোটেল কিংবা মোটামুটি মানের হোটেল, একরুমে কতজন থাকবেন এসবের উপর প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এর বাইরে পাসপোর্ট করা, মক্কা কিংবা মদিনা শরীফে এদিক-ওদিক যাওয়া, চা-নাস্তা খাওয়াসহ ব্যক্তিগত বেশ কিছু খরচ থাকে। যা হজ প্যাকেজের বাইরে হজযাত্রীকে খরচ করতে হয়। সব মিলিয়ে হজ করতে যাওয়ার জন্য বেশ বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হয়। যার সংস্থান করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে বহু মানুষই হজের পরিবর্তে ওমরা পালন করে আসছেন। ফলে দিনে দিনে হজযাত্রীর সংখ্যা ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের কয়েকটি বেসরকারি হজ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক আগ্রহী হজযাত্রী শেষ মুহূর্তে পিছু হটেছেন। কেউ কেউ ওমরা করে হজের ইচ্ছা পূরণ করার কথা ভাবছেন। একটি হজ এজেন্সির পরিচালক বলেছেন, মানুষ হজে যেতে চায়, কিন্তু বর্তমান আর্থিক চাপের কারণে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কিছু লোক সবকিছু ঠিকঠাক করেও প্যাকেজের উচ্চমূল্যের কারণে নিবন্ধন বাতিল করছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এ ব্লকের প্রবীণ হজপ্রত্যাশী মাওলানা ইকবালুর রহমান বলেন, জীবনে একবার হজ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন যা খরচ, তা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে যদি কখনো ব্যয় কমে আসে তাহলে যাবো। না হয় ওমরা করে আসবো।
তার মতে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের জন্য হজ ও ওমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা নগরীতে গিয়ে এই ইবাদতে অংশগ্রহণ করেন। হজ পালিত হয় আরবি জিলহজ মাসে, আর ওমরা আদায় করা যায় বছরের যেকোনো সময়। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমের মনে জীবনে একবার হলেও হজ করার আকুতি থাকে। কিন্তু হজের সাথে জড়িত আর্থিক সামর্থ্য। ধর্মেও আর্থিক এবং শারীরিক সামর্থ্যবানদের জন্যই জীবনে একবার হজ ফরজ করা হয়েছে।