
বৈষম্যবিরোধি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে যারা বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এর অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ৪১ জন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু করেছে দুদক। ক্ষমতা হারিয়ে দিশেহারা দলটির নেতারা এবার দুদকের জালে আটকা পড়ছেন। গ্রেপ্তার ও জনরোষ থেকে বাঁচতে বেশির ভাগ নেতা গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানের প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
সাবেক এমপিদের মধ্যে রয়েছেন বেনজীর আহমেদ (ঢাকা–২০), সরওয়ার জাহান (কুষ্টিয়া–১), শরিফুল ইসলাম জিন্না (বগুড়া–২), শহিদুল ইসলাম বকুল (নাটোর–১), শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর–১), ছলিম উদ্দীন তরফদার (নওগাঁ–৩), কাজী নাবিল আহমেদ (দিনাজপুর–৪), এনামুল হক (রাজশাহী–৪), মামুনুর রশীদ কিরন (নোয়াখালী–৩), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী–৪), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর–৫), কাজিম উদ্দিন আহম্মদ (ময়মনসিংহ–১১), স্বপন ভট্টাচার্য্য (যশোর–৫), আনোয়ার হোসেন (পিরোজপুর–২), নূর–ই আলম চৌধুরী (মাদারীপুর–১), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (জয়পুরহাট–২), শেখ হেলাল উদ্দীন (বাগেরহাট–১), এনামুল হক (রাজশাহী–৪), কামরুল ইসলাম (ঢাকা–২), হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া–২), জিয়াউর রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২) ও শাজাহান খান (মাদারীপুর–২)।
সূত্র জানিয়েছে, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন এমন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সরকারের সাবেক ও বর্তমান পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ধাপে ধাপে সবার ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলা করা হবে।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিযোগ নিয়ে কমিশনে পদ্ধতিগত বিষয় এবং গোয়েন্দা উইংয়ে কাজ চলছে। সেখানে তাদের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির নামে সিন্ডিকেট গড়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ (লোটাস কামাল) তিনজন সাবেক সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সিন্ডিকেট সদস্যরা দেড় বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছে সংস্থাটি। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম অভিযোগের অনুসন্ধান করবে। দুদক ইতোমধ্যে অভিযোগের বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে।
গত ৮ আগস্ট যাত্রা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় শিগগির দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালো টাকা উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে অভিযান পরিকল্পনা চূড়ান্তের কাজ শুরু হয়েছে।
শুধু আওয়ামী লীগ নেতারাই নয়, বিগত সরকারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পুলিশসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাবে দুদক। ইতোমধ্যে সেই কাজও শুরু হয়েছে।













































