বৃহস্পতিবার- ২৭ মার্চ, ২০২৫

পাকিস্তানি সেই জাহাজে ফের ভারতের ঘুম হারাম!

পাকিস্তানি সেই জাহাজে ফের ভারতের ঘুম হারাম!
print news

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৫৩ বছর ধরে পাকিস্তান থেকে সরাসরি কোনো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসেনি। গত জুলাই অভ্যুত্থানে পর ১৩ নভেম্বর প্রথমবারের মতো করাচি হয়ে চট্টগ্রামে নোঙর ফেলে পানামা পতাকাবাহী পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’।

আবার সেই জাহাজ আসার খবরে ফের ঘুম হারাম ভারতের। জাহাজটিতে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং, খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিনসহ বিভিন্ন পণ্য থাকলে ভারতের ধারণা এরমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ছিল। যা ভারতের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে।

এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সেই আলোচনা-সমালোচনা শেষ হতে না হতে ফের করাচি ঘুরে জেবেদ আলী বন্দর থেকে চট্টগ্রাম আসছে জাহাজটি। বর্তমানে জাহাজটি ভারত মহাসাগরে অবস্থান করছে। গত ১১ ডিসেম্বর রাতে জাহাজটি করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বলে জানান, জাহাজটির পরিচালন সংস্থা শিপিং কোম্পানি রিজেন্সি লাইনস লিমিটেডের মুখপাত্র মাশহুর আলম।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত পণ্য আসে। ওখান থেকে জাহাজ আসলে সমস্যা কী, সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না।’ করাচির সঙ্গে তো নৌ-বাণিজ্যে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জাহাজটি নিয়ে ভারতের এত মাথা ব্যাথা কেন সেটাও তো বুঝতে পারছি না। ভারত আসলে কি চাই, সেটা সম্প্রতি পরিস্কার হয়ে গেছে। ভারতের আগ্রাসী মনোভাব দেশের জনগণ বুঝে গেছে।

জাহাজটিতে কী আনা হচ্ছে সেটি জানতে চাইলে শিপিং কোম্পানি রিজেন্সি লাইনস লিমিটেডের মুখপাত্র মাশহুর আলম বলেন, ‘জাহাজটিতে কী কী আনা হচ্ছে সেটি কাস্টমস থেকে পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন। তবে এটি নিশ্চিত, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিনিয়ত যেসব পণ্য আসে, সেসব পণ্যই আসবে। বন্দর দিয়ে নিয়মবহির্ভূত কোনো পণ্য খালাস তো হতে পারে না। তাই এটি নিয়ে কোনো ভুল তথ্য না ছড়ায় সেদিকে যেন সবাই সজাগ থাকে।’

শিপিং কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, মূলত পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও রাসায়নিক, খনিজ পদার্থ ও ভোগ্যপণ্য—এসব পণ্যই পাকিস্তান থেকে আনা হয় কনটেইনারে। এবারও জাহাজটিতে এসব পণ্য থাকতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে তো সবসময়ই নিয়মিত পেঁয়াজ, ক্লিংকারসহ বিভিন্ন পণ্য আসে। তাই পাকিস্তান থেকে কোন জাহাজ আসছে বা কী পণ্য আসছে, সেটিকে আমরা আলাদা করি দেখি না। তবে জাহাজটি যখন বাংলাদেশ সীমানায় এসে বিএল (বিল অব লেডিং) দাখিল করবে, তখন ওখানে কি কি পণ্য আছে, সেটি বিস্তারিত জানাতে পারবো।’

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্সি লাইনস লিমিটেডের পরিচালনাধীন ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের পণ্যবাহী জাহাজ করাচি থেকে সরাসরি প্রথম চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ১৩ নভেম্বর। জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার নামানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কনটেইনার।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ছয় হাজার ৩৩৭ টন পণ্য আনা হয়। পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ, যা টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। এতে মোট ১১৫ কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কনটেইনারে। এছাড়া কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ।

করাচি-চট্টগ্রামে সরাসরি জাহাজযাত্রাকে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ বলে আখ্যায়িত করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য শুরু হওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি প্রতিবেশি দেশ ভারত। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম প্রতিবেশীর মধ্যে এই নতুন সংযোগ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা খুবই নিন্দনীয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, পাকিস্তান-বাংলাদেশ জাহাজ যাত্রা ‘ঐতিহাসিক জটিল’ সম্পর্কের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গণ অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক হিসেবে গড়ে উঠছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page