
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকতে মিললো বিরল প্রজাতির ৭টি মরা কচ্ছপ। চলতি সপ্তাহের রবিবার থেকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সৈকত এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ৭টি মরা কচ্ছপের দেখা মিলে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এমন তথ্য জানিয়েছেন আনোয়ারা উপজেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়া। তিনি বলেন, রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে সৈকতের দক্ষিণ দিকের প্রথম দুটি মৃত কচ্ছপ নজরে আসে স্থানীয়দের। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে টানেলের সার্ভিস এরিয়ার পিছনে দুটি এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে লুসাই পার্কের সামনে আরো তিনটি কচ্ছপের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, পারকি সমুদ্র সৈকতে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। কচ্ছপগুলো কখন কিভাবে মারা গেছে তাও জানা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে পারকি সৈকত এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠার পর এই প্রথম কচ্ছপ মারা যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কচ্ছপগুলোর মৃত্যুর বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। তবে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ করলে কচ্ছপগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স¤পর্কে জানা যাবে।
স্থানীয়রা জানান, কচ্ছপগুলোর ওজন ২৫ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত। যেগুলোর প্রায় পচন ধরেছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় দুটি কচ্ছপ রবিবার এখনকার ব্যবসায়ীরা মাটিচাপা দেয়। বাকিগুলোর বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। এগুলো সৈকত থেকে সরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা।
সৈকতে বেড়াতে আসা নুরুল করিম নাহিদ নামে এক যুবক জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে আসি সৈকতে। পায়ে হেঁটে চরের দক্ষিণে যাওয়ার সময় মৃত অবস্থায় কয়েকটি কচ্ছপ জোয়ারের পানিতে ভেসে আসতে দেখি। কচ্ছপগুলোর শরীরে পচন ধরেছে। এগুলো থেকে চরম দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
কচ্ছপগুলোর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য বলেন , এগুলো জলপাইরঙা সাগর কাছিম বা পান্না কাছিম। এই প্রজাতির কচ্ছপ বাংলাদেশে বেশি দেখা যায় না। এগুলো বয়সজনিত কারণ, মাছধরার ট্রলার বা শিপের সঙ্গে আঘাত, মাছধরার জালের আঘাতে অথবা বিষক্রিয়ায় মারা যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসোর্চ সেন্টারের গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এতগুলো কচ্ছপ এক সঙ্গে মারা যাওয়াটা উদ্বেগের বিষয়। তবে মনে হচ্ছে, জাহাজ থেকেও অনেক সময় বিষাক্ত পদার্থ পানিতে ফেলা হয়। এর বিষক্রিয়ায় এসব কচ্ছপের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পারকি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি তাহমিনা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।