বৃহস্পতিবার- ১৩ মার্চ, ২০২৫

ফের চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন

লাভজনক হওয়ার পরও বন্ধ কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন
print news

ফের চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে চলাচলকারী একমাত্র বিশেষ ট্রেন ‘কক্সবাজার স্পেশাল’। ঈদুল আজহা উলপক্ষ্যে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ফের ট্রেনটি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ।

শুক্রবার (৩১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী। ইঞ্জিন ও লোকো মাস্টার সংকটের কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্রেনটি।

ডিজি বলেন, গত রোজার ঈদের এ রুটে ট্রেনটি চালু করা হয়। পরবর্তীতে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় আর বন্ধ করা হয়নি। লোকো ড্রাইভার ও গার্ড স্বল্পতা এবং মিটারগেজ ইঞ্জিনের সংকট বিবেচনায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে আগামী ১২ জুন থেকে ঈদ স্পেশাল হিসেবে ফের ট্রেনটি চালানোর পরিকল্পনা আছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি নিয়মিত কোনো ট্রেন নয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১২ জুন থেকে এটি চালু হবে। এরপর ১০-১২ দিন চলাচল করে আবার বন্ধ হয়ে যাবে। স্পেশাল ট্রেন মানে যেকোনো সময় চলবে, তারপর আবার বন্ধ হয়ে যাবে।

এর আগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেনের সই করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকো মাস্টারের সংকট থাকার কথা জানানো হয়েছে। এজন্য কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত বাতিল করা হলো।

তবে চাহিদার তুঙ্গে থাকা ট্রেনটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানান যাত্রীরা। অভিযোগ ওঠে, বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে ট্রেনটি বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যদিও ট্রেনটি গত ঈদুল ফিতরের আগে স্পেশাল হিসেবে চালু হয়েছিল। তবে যাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে ট্রেনটি গত ১০ জুন পর্যন্ত চালুর কথা ছিল। এর আগেই গতকাল থেকে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর ট্রেনটি অনতিবিলম্বে চালুর দাবি জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ৩০ মে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের পর শুধু রাজধানীবাসীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার দুটি ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

ফলে চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনগণ জমিজমা, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নদী-নালা, খাল-বিল বিলীন করে রেলপথের জায়গা জন্য ছেড়ে দিলেও এই ট্রেন সার্ভিস চালুর পর থেকে তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এতে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির মুখে গত ঈদুল ফিতরের সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে কক্সবাজার স্পেশাল নামে একটি ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। সড়ক পথে নৈরাজ্য, সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে যাত্রী সাধারণ যখন সীমিত সুবিধা এই ট্রেনটির প্রতি ঝুঁকছিলেন। এরই মধ্যে ট্রেনটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়। যাত্রাপথে ট্রেনটি ষোলশহর, জানালিহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে এবং যাত্রী পরিবহন করে। মোট ১০টি বগিতে আসন রয়েছে ৪৩৮টি। বিশেষ ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি আসনের জন্য ১৮৫ টাকা। তবে কক্সবাজার পর্যন্ত এই ভাড়া যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩৪০ টাকা।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। যদিও এর আগে প্রকল্পের কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে যায়। গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১ ডিসেম্বর ২৩ তারিখ থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page