শনিবার- ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইয়া নবী সালাম আলাইকা-ধ্বনিতে মুখরিত চট্টগ্রাম

ইয়া নবী সালাম আলাইকা-ধ্বনিতে মুখরিত চট্টগ্রাম

বিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)‘র জুলুসে ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০টায় নগরীর ষোলশহর আলমগীর খানকাহ থেকে শুরু হয় এই জুলুস। সিরিকোট দরবারে আলীয়া কাদেরিয়ার সাজ্জাদনশীন পীর সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ জুলুসের নেতৃত্ব দেন।

জুলুসে ঢল নামে রাসুলপ্রেমি লাখো মানুষের। ঘটে অঘটনও। সেটা হলো জুলুসের ভীড়ের চাপে ও ব্রিজ ভেঙে মারা যায় ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ ও ১৩ বছরের এক কিশোর। বৃদ্ধের নাম মো. আইয়ুব আলী, তিনি এসেছেন পটিয়া থেকে। আর কিশোরের নাম সাইফুল ইসলাম। এছাড়া আরও ৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরে আলম আশিক।

এসআই আশিক বলেন, শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় জুলসে ভিড়ের মধ্যে গরমে অসুস্থ হয়ে কয়েকজন মাটিতে পড়ে যান। এ সময় নালার একটি ছোট ব্রিজও ভেঙে পড়ে। এতে আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক দু‘জনকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন :  বিএনপির অনুষ্ঠানে লীগ-ঘনিষ্ঠ অপু বিশ্বাস, যা বললেন পরীমনি

আহত ৬ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তম্মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) রাখা হয়েছে বলে জানান আশিক।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আঞ্জুমানে রহমানিয়া ট্রাস্টের মেডিকেল টিমের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, মানুষের ভিড়ের মধ্যে গরমে অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান কয়েকজন। পদদলিত হয়ে তারা গুরুতর আহত হন। ভীড়ের চাপে তখন নালার উপর থাকা ছোট একট ব্রিজ ভেঙে যায়। আহত অবস্থায় আটজনকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসি। এর মধ্যে দু‘জনের মৃত্যু হয়েছে।

আমিনুর রহমান আরও বলেন, শনিবার ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা মুরাদপুর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন। জুলুস শুরুর আগেই লাখ, লাখ মানুষের জমায়েতে লোকারণ্য হয়ে ওঠে মাদরাসার আশপাশের এলাকা। এরপর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বেস্টনির মধ্য দিয়ে সাবির শাহকে বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে থাকে নবীপ্রেমীদের মহামিছিল।

আরও পড়ুন :  ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) আবহে সাজলো চট্টগ্রাম

নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় হয়ে পুনরায় একই রুটে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া ময়দানে গিয়ে মিলিত হন মুসল্লিরা। সেখানে মিলাদ মাহফিল ও যোহরের নামাজ শেষে মোনাজাত করা হয়। এতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও বিশ্ব শান্তির প্রার্থনা করা হয়।

জুলুসে আরও উপস্থিত ছিলেন- শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ। জুলুসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহজুড়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে শোভা পাচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবীতে স্বাগত জানিয়ে তৈরি করা তোরণ। বর্ণিল আলোকসজ্জাও করা হয়েছে।

মাইক ও সাউন্ডবক্সে হামদ, নাত, গজলসহ নানা ধরনের ইসলামী গানে বন্দরনগরী জুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়, এয়া নবী সালাম আলাইকা, তুমি সৃষ্টির সেরা নবী কামলিওয়ালা, সাহারাতে ফুটল রে ফুল রঙ্গিন এমন নানা গানে মাতোয়ারা হন অংশগ্রহণকারীরা।

আরও পড়ুন :  মিলাদুন্নবীর (সা.) জুলুসে দু‘জনের মৃত্যু, ৬ জন হাসপাতালে

জুলুসে শরিয়ত সম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে ড্রাম সেট বাজানো, নারীর অংশগ্রহণ ও খাবার নিক্ষেপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।

মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) জন্ম ও ওফাত দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে প্রতি বছর এদিনে আয়োজিত হয় জশনে জুলুস, যার আয়োজন করে আঞ্জুমানে আহমদিয়া রহমানিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এবারের ৫৪তম আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।

ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে খ্যাত এই আয়োজন এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। ঈদে মিলাদুন্নবীর এতো বড় জুলুসের নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল থেকে চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের সূচনা হয়।

ঈশান/মখ/মসু

আরও পড়ুন