সোমবার- ২০ অক্টোবর, ২০২৫

ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ

ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ

শ বছর আগেও দেশের শীর্ষ ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। আইনকানুন পরিপালন, গ্রাহককে সেবা দেওয়া ও আর্থিক সূচকে অন্য সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই ব্যাংক। গ্রাহকের আস্থার কারণে স্থানীয় আমানত কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে এটি সবচেয়ে এগিয়ে ছিল।

ব্যাংকটির আকার এতটাই বড় হয়ে উঠেছিল যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হতো—ইসলামী ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়লে পুরো খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ তৈরি হবে, যা রোধ করা সম্ভব হবে না।কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছর সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ।

এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে পাচার করেছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক–তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি।

আরও পড়ুন :  আন্তর্জাতিক পর্ন তারকা চট্টগ্রামের এক নারী, নজর নেই পুলিশের

সোমবার (১২ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনা, শিগগির কী করতে হবে’ শীর্ষক পর্যালোচনা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তবে ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা।

সিপিডি বলেছে, পুরো ব্যাংক খাত চলে গেছে নিয়মনীতির বাইরে। এত দিন বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রসারে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক দশকের বেশি সময় ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসব কেলেঙ্কারির পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন :  ওমান থেকে কফিন বন্দি হয়ে ফিরল আট প্রবাসী

অন্যদের মধ্যে সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করতে ব্যাংক কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। আরও বলেছে, ব্যাংক খাতে দ্বৈত প্রশাসন চলছে। বন্ধ করে দেওয়া উচিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ ছাড়া কোনো ধরনের বিবেচনা ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার সংস্কৃতিও বন্ধ করতে হবে।

সিপিডি বলেছে, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের হাতেই সাতটি ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। একসময় ইসলামী ব্যাংক ভালো ব্যাংক ছিল। দখলের পর তা–ও মুমূর্ষু হয়ে গেছে। এ ছাড়া একক গ্রাহকের জন্য ঋণসীমা নীতি লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংক এননট্যাক্স গ্রুপকে দিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে একক গোষ্ঠী যদি এত বেশি পায়, অন্য গ্রাহকেরা কী পাবে।

আরও পড়ুন :  বাড়ি-গাড়ি, জাহাজ-লরি সবই আছে যমুনা অয়েলের গেজার জয়নালের!

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন না যে তাদের স্বাধীনতা নেই; তারা এটা ব্যবহার করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বরং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে নীতিমালা করেছে। দুই বছর ধরে দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে। দরকার ছিল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু বিশেষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর যাতে সুবিধা হয়, সে জন্য সুদহার বাড়ায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে বিভাগটির আওতায় থাকা ব্যাংক ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ নিয়োগ দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ তাহলে কে করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থ বিভাগ করবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page