
রাজধানী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস যখন দমকলের নলে পানি ঢালছিল। ঠিক শেষ মুহুর্তে বুকের আগুন নেভাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ভাসছিল ওমান থেকে কফিন বন্দি হয়ে ফেরা সেই আট প্রবাসীর স্বজনদের চোখের জলে।
যাদের মধ্যপ্রাচ্যে হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে একমুঠো সুখ নিয়ে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সাগর পাড়ের জীবনে তাদের সুখের ফেরা আর হলো না। রোববার (১৮ অক্টোবর) সকালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে সাগরপথে চালু হওয়া স্পিডবোটে সাতজনের মরদেহবাহী কফিন নিয়ে যাওয়া হয় নিজ এলাকায়।
চোখের সামনে একসঙ্গে এত লাশ, স্বজনদের আহাজারি তো ছিলই, কান্নায় ভিজেছে ঘাটপাড়ের মানুষ, নৌযানের মাঝিমাল্লা, গ্রামবাসী আর দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাওয়া মানুষ। এর আগে স্বজনদের চোখের জলে ভাসছিল চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
এমন তথ্য জানান বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। তিনি জানান, ওমানে সড়ক দুর্ঘটনার ১০ দিন পর শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আটজনের মরদেহ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।
এ সময় বিমানবন্দরে স্বজনদের আহাজারিতে শোকের আবহ নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এরপর লাশগুলো হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। এরপর রোববার সকালে সাতজনের লাশ নেওয়া হয় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা ঘাটে। সেখান থেকে ¯িপডবোটে করে শেষবারের মতো তারা কফিনবন্দি হয়ে সাগর পাড়ি দেন।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মং চিংনু মারমা বলেন, রোববার সকালে মরদেহ নিয়ে সন্দ্বীপে পৌঁছান স্বজনরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টায় পূর্ব সন্দ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একসঙ্গে সবার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
এরপর তাদের নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ দ্রুত দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ায় ওমানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত ও ওমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সন্দ্বীপের মানুষ।
ইউএনও জানান, গত ৮ অক্টোবর ওমানের ধুকুম প্রদেশের সিদরা এলাকায় আট প্রবাসীকে বহনকারী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারা ঘটনাস্থলেই নিহত যান। মোহাম্মদ আমীনের নেতৃত্বে তারা সবাই সাগরে মাছ ধরার পেশায় ছিলেন। সেদিনও সাগরে মাছ শিকার করে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহত আট প্রবাসীর মধ্যে সাতজন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের বাসিন্দা। নিহতরা হলেন- সন্দ্বীপের মোহাম্মদ আমীন (৫০), মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) ও মোশারফ হোসেন (২৬)।
অপরজন হলেন রাউজান উপজেলার চিকদাইর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন (২৮)। তার মরদেহও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্দ্বীপের নিহত সাতজনের মধ্যে মোহাম্মদ আমীন ছাড়া বাকি ছয়জনের পরিবারই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। আমীন দীর্ঘসময় ধরে প্রবাসে থাকার কারণে মোটামুটি আর্থিকভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ডিসেম্বরে দেশে ফিরে বড় মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করার কথা তিনি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন। নিহত বাকি সবার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা আছেন। তাদের মধ্যে চারজন প্রথমবারের মতো বিদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর আগেই তাদের চলে যেতে হল পরপারে।












































