শনিবার- ৮ নভেম্বর, ২০২৫

ক্রিকেটে যৌন হয়রানির অভিযোগ জাহানারার, তারকাদের ক্ষোভ

২০২২ সালে নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ-নির্বাচকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বিসিবিতে চিঠি দিয়েছিলেন জাহানারা। তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা বিসিবির।

ক্রিকেটে যৌন হয়রানির অভিযোগ জাহানারার, তারকাদের ক্ষোভের ঝড়

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা যার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনছেন সেই মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এখন চীনে। সেখানে আছেন কোচিংয়ের দায়িত্বে। তবে নিজের ওপর ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

শুক্রবার বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই সাবেক নির্বাচক ও টিম ম্যানেজার বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, “সব মিথ্যা। আপনি দলের অন্য মেয়েদের জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য জাহানারার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছে।

শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়ে বিসিবি জানায়, ‘স্পর্শকাতর’ এই অভিযোগগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ জানাবে।

সব ক্রিকেটার ও সংশ্লিষ্ট সবার জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিসিবি নিবেদিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এই ধরনের ব্যাপারগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায় বিসিবি।

জাহানারার অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত সরকারও। বিসিবির পাশাপাশি সাবেক এই পেসারের পাশে দাঁড়ানোর কথা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি জানিয়েছেন, সরকারও এই ব্যাপারে জাহানারার পাশে থাকবে।

আরও পড়ুন :  সাজ্জাদ বাহিনীর কিলিং মিশন চট্টগ্রাম টু রাউজান

একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে তিনি বলেন, জাহানারা চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে সরকার।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। নিজের ফেসবুক পেজে তার পোস্ট, “জাহানারা আলম যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, সবগুলোই গুরুতর এবং সেসব সত্যি হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।”

পোস্টের শেষ দিকে তামিম লেখেন, “জাহানারার অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা যদি না নেওয়া যায়, যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো মেয়ে ক্রিকেট বা যে কোনো খেলায় আসতে ভয় পাবে, খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পিছপা হবে। আমরা সেটা হতে দিতে পারি না।”

এমন ঘটনায় চুপ থাকেননি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফেসবুক পেজে তার মন্তব্য, “বিসিবির তদন্ত কমিটি পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে, যেন এসবের পুনরাবৃত্তি আর কখনো না হয়।”

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত

কিন্তু বিসিবি কি সুষ্ঠু তদন্ত করবে? সেই প্রশ্নই উঠেছে এখন। কারণ, এর আগেও অনেক ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন সামনে আসেনি। সে কারণেই হয়তো তামিম তার পোস্টে ‘স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন’ ও মাশরাফি ‘তদন্ত কমিটি পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত’ থাকাকে উল্লেখে জোর দিয়েছেন।

জাহানারা বিচার পেতে পারতেন আগেই। এখন তিনি যে অভিযোগ আবার সামনে এনেছেন, সেটি বেশ পুরোনো। ২০২২ সালে নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ-নির্বাচকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বিসিবিতে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। দলে মঞ্জুর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে বিসিবিকে অবহিতও করেছিলেন। কিন্তু সেসব কিছুরই বিচার পাননি।

বিসিবির এই ‘বিচারহীনতার’ সংস্কৃতির কারণে দেশের ক্রিকেট এখন ভাবমূর্তি হারানোর মুখে। অনেকেই মনে করছেন, বোর্ডের ‘তদন্ত কমিটি’ মূলত চোখে ধুলো দেওয়া আর বাস্তবতা হচ্ছে ‘টালবাহানা’ করে অভিযোগকে পাশ কাটানো।

বিচার যদি হতো তবে জাহানারাকে মঙ্গলবার দেশের জাতীয় দৈনিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মঞ্জু ও বিসিবির নারী ক্রিকেট বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে অভিযোগ আনতে হতো না।

বৃহস্পতিবার রিয়াসাদ আজিমকে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে জাহানারাকে বলতে হতো না, বোর্ডের কাছে নয় অভিযুক্তদের তিনি বিচার চান আল্লাহর কাছে। কাঁদতে কাঁদতে অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩২ বছর বয়সী এই তারকা বলেন, “দেড় বছরে অসংখ্যবার অভিযোগ দিয়েছি (বিসিবিতে)। আমাদের যিনি হেড (বিসিবির সাবেক নারী উইংয়ের প্রধান), নাদেল স্যার, উনাকে বারবার বলেছি। এক-দুই দিন ঠিক হতো, পরে আবার যা-তাই। তৌহিদ ভাই, মঞ্জু ভাই—এদের কোনোদিন ক্ষমা করব না।”

আরও পড়ুন :  সাজ্জাদ বাহিনীর কিলিং মিশন চট্টগ্রাম টু রাউজান

২০২০ সালের অক্টোবরে নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান মঞ্জু। পরে টিম ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ জাহানারার? সেটি শুনুন তার মুখেই, “উনি (মঞ্জুরুল ইসলাম) একদিন আমার কাছে এলো। আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, তোর পিরিয়ডের কয়দিন চলতেছে? পিরিয়ড শেষ হলে বলিস, আমার দিকটাও তো দেখতে হবে। পিরিয়ড শেষ হলে, যখন ডাকব চলে আসিস।”

সেই সাক্ষাৎকারে মঞ্জুকে নিয়ে আরও অভিযোগ করে জাহানারা বলেন, “বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচে, যখন আমরা লাইনে হ্যান্ডশেক করি, তখন তিনি (মঞ্জুরুল) হ্যান্ডশেক না করে জড়িয়ে ধরতেন।”

অথচ দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মঞ্জু ও নারী ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে জাহানারা যে অভিযোগ আনেন, সেসব ‘ভিত্তিহীন, মনগড়া ও সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল বিসিবি।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page