
আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর খাতুনগঞ্জে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আসে ৭ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ। যার ওজন ১০৪ দশমিক ৫ মেট্টিক টন। কিন্তু এসব পেঁয়াজের অধিকাংশই পচা। ফলে আশাতীত মুল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।
বুুধবার (৭ জুন) বিকেলে এমন তথ্য জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ স¤পাদক মো. ইদ্রিস। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের ৭ ট্রাক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আসে। যার ওজন ১০৪ দশমিক ৫ মেট্রিকটন। তবে তীব্র তাপদাহের কারণে বেশিরভাগ পেঁয়াজে পচন ধরেছে। পচন ধরা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকায়, আর ভালো পেঁয়াজ বিক্রয় করা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকায়।
তিনি বলেন, ভারত থেকে এসব পেঁয়াজ ১৪-১৫ টাকায় কেনা হয়েছে। পরিবহণ খরচসহ এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৮-১৯ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। সে হিসেবে ব্যবসায়ীরা মনে করেছিল ২৪-২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রয় করা সম্ভব হবে। কিন্তু পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কারণে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমানুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আসা অর্ধেক পেঁয়াজ পঁচা। টানা কয়েকসপ্তাহ ট্রাকে পড়ে থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে। আমরা ভালো-মন্দ আলাদা করে বিক্রি করছি। পচার হিসেব সমন্বয় করে ভালো পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রয় করছি। ফলে খুচরা বাজারে ৫৫-৬০ টাকার নিচে পেঁয়াজ আপাতত মিলছে না।
অন্যদিকে দেশি পেয়াজও পচে গলে নষ্ট হচ্ছে। তারপরও ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজও এখন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। অথচ গত সোমবার দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রয় করা হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ পচা হলেও বাজারে সরবরাহ বাড়ায় সব মিলিয়ে পেঁয়াজের মূল্য অর্ধেক কমে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আরও আসলে দাম আরও কমবে। চলতি মাসের শেষে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে যেভাবে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে সে ধারা বজায় থাকলে দাম আর বাড়বে না। আমদানি কমে গেলে তখন আবার বাজার অস্থিতিশীল হবার সম্ভাবনা থাকবে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মোবারক বলেন, এখন যে পেঁয়াজগুলো আমদানি হচ্ছে সেগুলো ভারতে গোডাউনে রাখা ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১০ থেকে ১২ দিন আগে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতিপত্র দেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল। সে সময় কিছু কিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ লোড করে বর্ডারে এনে রাখে। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় পণ্যগুলো আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি। অনুমতির পর মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৪৫০টি ট্রাক এসেছে। এসব ট্রাকে প্রায় ৬ হাজার ৭৫ মেট্রিকটন পেঁয়াজ এসেছে। এরমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ পচা হবে। তবে আগামীকাল থেকে যে পণ্যগুলো আসবে সেগুলোর মান ভাল হবে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, দীর্ঘ আড়াই মাস পর গত ৫ জুন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অনুমতি দেয় সরকার। অনুমতির পর প্রথম দিনে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৫ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত পেঁয়াজভর্তি সাতটি ট্রাক খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে। মোট ১০৪ দশমিক ৫ মেট্রিকটন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন দোকান ও গুদামে চলে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টন। এই হিসাবে ৩ বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের ১৩ লাখ ১১ হাজার টন উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সে অনুযায়ী চাহিদার চেয়েও প্রায় ৬ লাখ টন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমার থেকে কম বেশি সারা বছরই পেঁয়াজ আমদানি হয়। এরপরও পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।