বৃহস্পতিবার- ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে এস আলমের ছয় কারখানা বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামে এস আলমের ছয় কারখানা বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ট্টগ্রামে আলোচিত-সমালোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ছয়টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল ও ইছানগরে কর্ণফুলী নদীর পাড় এবং বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় কারখানাগুলোর অবস্থান।

বন্ধ ঘোষণা করা ছয়টি কারখানা হলো- এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড-নফ, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রুপটির মানব স¤পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের স্বাক্ষরে এসব কারখানা বন্ধের বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকেরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও কারখানা চালু হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।এটি দেখে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নোটিশ পেয়েছি। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্যকারণবশত আগামী ২৫ ডিসেম্বর হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন :  ভক্তের প্রেমের প্রস্তাবে রাজী পিয়া জান্নাতুল, তবে...

তবে, নিরাপত্তা বিভাগ, ডেলিভারি সেকশন ও জরুরি বিভাগ (ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক) খোলা থাকবে। নোটিশে কারখানা খোলার তারিখ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জানান, এস আলম গ্রুপের ওই ছয় কারখানায় নিয়োগপ্রাপ্ত এবং ক্যাজুয়াল মিলে ১২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক রয়েছেন। হঠাৎ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সবাই।

বেলা সাড়ে তিনটার সময় কালারপুল এলাকায় এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছেন। তারা আকস্মিক নোটিশে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা বলেন।

আরও পড়ুন :  আমানত থেকে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক!

কারখানার ভেতরে যেতে চাইলে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা পরিদর্শক পরিচয়ে মোহাম্মদ ইউনুস নামের একজন বলেন, ভেতরে কথা বলার মতো কোনো কর্মকর্তা নেই, তাই ভেতরে যাওয়া যাবে না।

তবে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, আমাদের কারখানায় সবকিছু স্বাভাবিক চললেও আকস্মিক ছুটির নোটিশ দেয়া হলো। কোন কারণে সাধারণ ছুটি দিয়ে দিল, জানি না। আমরা এ পরিস্থিতিতে আকাশ থেকে পড়লাম

এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে কারখানা চালু করার সুযোগ নেই। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।

আরও পড়ুন :  চামড়া যাদের শক্ত সেসব মেয়েদের জন্য এই রঙিন জীবন : বর্ষা

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংক এস আলম মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এর আগে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা অন্তত ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বের করে নিয়েছেন।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন