
# ছাত্রশিবিরের বাইক মহড়া
# চবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
# মাঠে নামেনি আওয়ামী লীগ
লকডাউন ডেকে চট্টগ্রামে মাঠে নামেনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি। নগরজুড়ে সক্রিয় অবস্থান ছিল বিএনপি, জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশপথে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি এবং বাইক শোভাযাত্রা দেখা গেছে। চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কায় সড়কে অন্যদিনের চেয়ে যানচলাচল কিছুটা কম ছিল। একারণে যাত্রীর সংখ্যাও কিছুটা কম দেখা গেছে। অফিস-আদালত খুলেছে। তবে সেবাপ্রার্থীর উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, লকডাউন কর্মসূচিতে বৃহ¯পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর কিংবা বিভিন্ন আশপাশের উপজেলা থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান ও টহলে ছিল। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও ফোর্স নিয়ে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহর এলাকায় বুধবার রাত থেকে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে নাশকতা ঠেকাতে বুধবার থেকে চট্টগ্রামে সরব রয়েছে বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা। বুধবার দিনগত রাতে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেছে দলগুলো। বৃহ¯পতিবার ভোর থেকে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও বাইক শোডাউন দিতে দেখা যায়। এসময় কোথাও কোথাও নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে নিয়ে লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহতে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।
সরেজমিন এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহ¯পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। নগরীর অন্যতম প্রবেশমুখ বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতুর এলাকায় অবস্থান নেয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। নগরের চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় পৃথক কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের। বহদ্দারহাট মোড় ও মুরাদপুরে মাইক বাজিয়ে সরব ছিলেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। নগরের আরেক প্রবেশমুখ বায়েজিদ বোস্তামী থানা অক্সিজেন এলাকায়ও অবস্থান এবং মিছিল করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আজম খাজা বলেন, আমাদের পাল্টা কোনো কর্মসূচি নেই। তবে মাঠে বিএনপি ছাত্রদলের কর্মসূচির পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি তাদের কর্মসূচি হতে পারে। তবে আমাদের দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি নেই।
ছাত্রশিবিরের বাইক মহড়া
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা ও নাশকতা প্রতিরোধে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাইক শোডাউন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
বৃহ¯পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে নগরীর মুরাদপুর, ষোলশহর, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়, কাজির দেউড়িসহ নগরীর আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মোটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দেন শিবিরের নেতাকর্মীরা। এরপর নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
মহড়ায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা শিবিরের সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল ও দক্ষিণ মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইমুনুল ইসলাম মামুন।
তানজীর হোসেন জুয়েল সাংবাদিকদের বলেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কথিত লকডাউন কর্মসূচির নামে দেশে অপতৎপরতা শুরু করেছে। চট্টগ্রামেও তারা অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা রোধে রাজপথে আছি। আমরা চট্টগ্রামের জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে আছি। ছাত্রশিবির সবসময় জনগণের পাশে থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
ছাত্রশিবিরের মহানগর উত্তর শাখার প্রচার স¤পাদক সিরাজী মানিক জানান, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে বাইক শোডাউন করেছি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ছাত্রশিবিরের এই কার্যক্রম দিনব্যাপী অব্যাহত ছিল। এছাড়াও নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
সীতাকুন্ডে টায়ার জ্বালিয়ে আ‘লীগের বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৩
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে মহাসড়কের তিনটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে লকডাউন কর্মসুচি পালন করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাছাড়া তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোর রাতে সীতাকুন্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা, কুমিরা ও ছলিমপুরে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে তারা। খবর পেয়ে এসব এলাকায় সীতাকুন্ড উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে। এতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমল কদর ও যুবদল নেতা ফজলূল করিম চৌধুরীসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা আওয়ামী লীগের নৈরাজ্যে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।
এছাড়াও সকাল থেকে সীতাকুন্ড পৌরসভার সিকিউর সিটির সামনে অবস্থান নেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর জামায়াতের আমীর হাফেজ আলী আকবরের নেতৃত্বে পৌরসদর বাজারে লকডাউনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
অপর দিকে বুধববার রাতে তিন শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলো- নিজামপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম রাফি, বারৈয়ারঢালা তাহের মঞ্জু কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আরাফাত হোসেন আসিফ। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি মুজিবর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কে টায়ার জ্বালানোর কোনো তথ্য জানা নেই। আটকৃতরা ছাত্রলীগ করত। তাদের আগের করা মামলার অজ্ঞাত আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
চবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
আমাদের চবি প্রতিবেদক রেদোয়ান আহমেদ জানান, দেশব্যাপী কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
বৃহ¯পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় চাকসু ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) উদ্যোগে বিক্ষোভটি শুরু হয়। এরপর কাটাপাহাড় সড়ক হয়ে জিরো পয়েন্টে এসে সমাবেশের মাধ্যমে মিছিল শেষ হয়।
সমাবেশে চাকসুর যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক স¤পাদক ইসহাক ভূঁঞা বলেন, খুনি হাসিনার পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম আওয়ামী লীগ আর প্রকাশ্যে আসতে পারবে না। কিন্তু সুশীল ইন্টেরিম সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে তারা প্রকাশ্যে মিছিল করছে, ব্যানার টানাচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই, ক্যা¤পাসে যারা অস্থিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যানার টানিয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার করতে হবে।
এ সময় চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, খুনি হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে তার অনুসারীরা অপকর্ম শুরু করেছে। আমরা দেখেছি, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর হত্যাকান্ড এবং পিলখানা হত্যাকান্ডের মূল হোতা ছিল খুনি হাসিনা। সেই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি জানালেও ইন্টেরিম সরকার এখন পর্যন্ত বিচার করেনি। আমরা জুলাইয়ে বৈষম্যহীন একটা রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু এই সরকার জুলাই শহীদদের বিচারে সন্তোষজনক রায় প্রকাশ করতে পারেনি।
ইব্রাহিম রনি আরও বলেন, যারা এই ক্যা¤পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য ছাত্রলীগকে ইন্ধন দিচ্ছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা ইন্টেরিমকে বলতে চাই, খুনি হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি, বাণিজ্যিক স¤পর্ক রাখা যাবে না।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, চাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি স¤পাদক হারেস মাতব্বর, স্বাস্থ্য বিষয়ক স¤পাদক, সহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি স¤পাদক, ছাত্রী বিষয়ক স¤পাদকসহ নির্বাহী সদস্যবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সারাদেশে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে। একইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করে। মামলার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার) ঘোষণা করা হবে। এতে আসামি হিসেবে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। জুলাই হত্যাযজ্ঞ নিয়ে এটাই প্রথম মামলা যার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হলো।











































