বৃহস্পতিবার- ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

চবির ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিল, কমলো ২২৫ আসন, জিপিএ শিথিল

চবির ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিল, কমলো ২২৫ আসন, জিপিএ শিথিল

ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ১৬৬টি পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। একইসাথে বিভিন্ন বিভাগ থেকে মোট ২২৫টি সাধারণ আসন কমানো হয়েছে এবং আবেদন যোগ্যতায় জিপিএ দশমিক ৫০ পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে।

আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া চলবে। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি থেকে। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও চট্টগ্রাম মূল ক্যাম্পাসের পাশাপাশি বিভাগীয় শহর ঢাকা ও রাজশাহীতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যাহ পাটওয়ারী এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. ইকবাল শাহীন খান এসব পরিবর্তন ও সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।

ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটির দ্বিতীয় সভায় এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তটি আসে। রোববার সকালে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিনসহ ভর্তি কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন :  ক্ষমতায় গেলে আ`লীগের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল

পোষ্য কোটা বাতিলের কারণ সম্পর্কে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এই কোটা চালু থাকলে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে চাপ আসতে পারে, যা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এমন পরিস্থিতি এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, পোষ্য কোটা বাতিলের ফলে অনেকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ার যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তা ঠিক নয়।

সভা সূত্রে জানা যায়, পোষ্য কোটা বাতিল হলেও এ বছর মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বিদেশি শিক্ষার্থীসহ মোট ৯ ধরনের কোটা চালু থাকছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর মোট ৪ হাজার ৩০৫টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সাধারণ আসন থাকছে ৩ হাজার ৭৮৬টি এবং বাকি ৫১৯টি আসন কোটার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বছর মোট আসন ছিল ৪ হাজার ৬৮৪টি।

এ বছর ৯ ধরনের কোটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১২টি আসন মুক্তিযোদ্ধা (সন্তান) কোটায়, ১১১টি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য, ৯৪টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ৬টি অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ৫১টি অ-উপজাতি (পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি), ২০টি শারীরিক প্রতিবন্ধী, ১১টি বিকেএসপি, ৫টি পেশাদার খেলোয়াড় এবং ৯টি দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

২২৫ আসন কমানোর পেছনের কারণ

এ বছর ১৮টি বিভাগ থেকে মোট ২২৫টি আসন কমানো হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অ্যাকাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, ফাইন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগের আসন ১১০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আসনও ১২০ বা ১১০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন :  অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে দেখামাত্র ব্রাস্টফায়ারের নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

এ ছাড়া রসায়ন, অর্থনীতি, রাজনীতিবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, লোক প্রশাসন, আইন বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আসনও কমানো হয়েছে।

আসন কমানোর বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী জানান, ফলাফলভিত্তিক পাঠ্যক্রম চালুর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বড় ক্লাসগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে পাঠদান করতে হবে। এক ক্লাসে ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রাখা যাবে না, তাই আসন কিছুটা কমানো হয়েছে।

তবে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যাহ পাটওয়ারী একটি ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ফলাফলভিত্তিক শিক্ষা পাঠক্রম এই বছর থেকেই শুরু হচ্ছে না, এটি পরবর্তীতে সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর সময় কার্যকর হবে। তবে আসন কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় এখন প্রতিটি বিভাগে ১০০ জন করেই ভর্তি নেওয়া হবে এবং ক্লাসে শিক্ষার্থী কমবে।

আবেদন যোগ্যতা শিথিল

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ায় ভর্তিচ্ছুদের কথা বিবেচনা করে এ বছর আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা কমানো হয়েছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—তিনটি শাখার ক্ষেত্রেই মোট জিপিএ সামান্য কমানো হয়েছে।

আরও পড়ুন :  সাবেক মন্ত্রী নওফেলের বাসায় পুলিশের অভিযানে আটক ৭

‘এ’ ইউনিটে (বিজ্ঞান) আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে (চতুর্থ বিষয়সহ) মোট জিপিএ ৭ দশমিক ৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘বি’ ইউনিটে (মানবিক) মানবিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট জিপিএ ৬ দশমিক ৫০ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট জিপিএ ৭ নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপাচার্যের অসন্তোষ

রোববারের সভায় পরীক্ষার পূর্বঘোষিত সম্ভাব্য সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি (শুক্রবার) ‘এ’ ইউনিট, ৩ জানুয়ারি (শনিবার) ‘ডি’ ইউনিট, ৫ জানুয়ারি (সোমবার) ‘ডি-১’ উপ-ইউনিট, ৭ জানুয়ারি (বুধবার) ‘বি-১’ উপ-ইউনিট, ৮ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ‘বি-২’ উপ-ইউনিট, ৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) ‘সি’ ইউনিট এবং ১০ জানুয়ারি (শনিবার) ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক প্রক্রিয়া নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নন। তিনি জানান, ভর্তি পরীক্ষা যদি একদিনে সম্পন্ন করা যেত, তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আবাসন ও যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো সম্ভব হতো। তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একদিনে পরীক্ষা সম্পন্ন করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভবিষ্যতেও সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page