Skip to content

শুক্রবার- ৬ জুন, ২০২৫

জ্বালানিবাহী চার জাহাজে বিস্ফোরণ-আগুন, নাশকতা হতে পারে

জ্বালানিবাহী চার জাহাজে বিস্ফোরণ-আগুন, নাশকতা হতে পারে

লতি মাসের গত ১৫ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও কুতুবদিয়ায় জ্বালানিবাহী চারটি জাহাজে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। একের পর এক বিস্ফোরণ ও আগুন লাগার এ ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না কেউ।

সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, এসব ঘটনা নাশকতা হতে পারে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে এসব ঘটনা ঘটনো হতে পারে। বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনার শুরু থেকে এমন কথা বলে আসছে। ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিও ইতোমধ্যে নাশকতার গন্ধ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

তবে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম বলেছেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের দুটি অয়েল ট্যাংকার এবং সর্বশেষ দুটি ট্যাংকারে আগুনের ঘটনা ভিন্ন প্রকৃতির। জ্বালানি বহনকারী ট্যাংকারে ধারাবাহিক আগুনের ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্তের আগে বলা সম্ভব নয়।

বিপিসির তথ্যমতে, গত শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘বিএলপিজি সোফিয়া’ এবং তানজানিয়ার পতাকাবাহী ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ দুটির ৩১ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকার এলপি গ্যাস পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি বন্দর, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য উদ্বারকারী সংস্থা।

কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি জানান, বিএলপিজি সোফিয়া জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছিল। তবে কোন দেশ থেকে আসছিল এবং কী পরিমাণ এই জাহাজে এলপিজি ছিল, তা জানা যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা জানতে কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

তানজানিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এলপিজি নিয়ে গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর কুতুবদিয়ায় পৌঁছে। বসুন্ধরার মালিকানাধীন এমটি মারিয়া, সোফিয়া ও চাতকি লাইটার ট্যাংকার সেখান থেকে এলপিজি খালাসের দায়িত্বে ছিল। মারিয়া খালাস নিয়ে চলে যায়।

শনিবার রাতে সোফিয়া জাহাজে এলপিজি খালাস শেষ হয়, কিন্তু মাদার ভেসেল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। এরই মধ্যে বিস্ফোরণে আগুন লেগে যায়। একই সঙ্গে ক্যাপ্টেন নিকোলাসেও আগুন লাগে। তবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিকোলাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন জাহাজের ক্রুরা। কিন্তু সোফিয়া জাহাজে আগুন দ্রুত বাড়তে থাকে। সোফিয়ার পরই এলপিজি খালাসের জন্য অপেক্ষায় ছিল এমটি চাতকি। ফলে মাদার ভেসেলের কাছাকাছি ছিল জাহাজটি। আগুনের ঘটনার পর উদ্ধার কাজে সরাসরি অংশ নেন ওই জাহাজের নাবিকরা।

ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরমান উল্লাহ আনসারি বলেছেন, সোফিয়ার পরই মাদার ভেসেলের কাছে আমাদের জাহাজের ভেড়ার কথা, তাই কাছাকাছিই ছিলাম। এ সময় দুর্ঘটনার খবর জানতে পারি। এরই মধ্যে একটি আওয়াজ আসে এবং আগুন দেখতে পাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে সোফিয়া জাহাজের প্রথম ও দ্বিতীয় ট্যাংকার হয়ে তৃতীয় ট্যাংকারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আমি পোর্ট কন্ট্রোল ও কোস্টগার্ডকে জানাই। পাশাপাশি সহযোগিতা চেয়ে জরুরি সিগন্যাল চালু করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বসুন্ধরার মালিকানাধীন টাগবোট তুফান এক্সপ্রেস কাছাকাছি চলে আসে।

নিকোলাস জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সবাই নিরাপদ আছে বলে জানান। আগুন লেগে যাওয়ায় সোফিয়া জাহাজের নাবিকরা সাগরে ঝাঁপ দেন। এরপর আমরা তাদের উদ্ধার করি।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ‘বাংলার জ্যোতি’ অয়েল ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। ওই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘বাংলার সৌরভ’ নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগে। ওই জাহাজটিও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন। ওই দিনের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়।

‘এমটি বাংলার সৌরভ’ নামের জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক। শনিবার (৫ অক্টোবর) বিএসসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, এসব ঘটনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা। একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক অনুপম বড়ুয়া। তিনি বলেন, জ্বালানিবাহী জাহাজগুলোতে অগ্নিদূর্ঘটনায় নাশকতার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সচিব শাহিনা সুলতানা বলেছেন, এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলেই জানি। তবে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। নাশকতার বিষয়ে তদন্তের পরই বলা যাবে। তদন্তের আগে মন্তব্য করতে রাজি হননি বিস্ফোরণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেনও। তবে তিনিও জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তায় বিঘ্নের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কুতুবদিয়া অ্যাংকারেজ এলাকায় অবস্থানরত এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস জাহাজ ও সোফিয়া জাহাজে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমানকে। কমিটিতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিও আছেন। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম জানান, জাহাজে চারটি আগুনের ঘটনায় প্রকৃতিগত পার্থক্য আছে। শনিবার রাতে কার্গো অপারেশনের সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে, ফলে সেখানে সেইফটি-সিকিউরিটির ঘাটতি ছিল কি না, সেটা তদন্ত কমিটি দেখবে। নাশকতার বিষয়ে তিনি বলেন, ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া এটা বলা মুশকিল।

এদিকে কারও ওপর দোষ না চাপিয়ে তদারক সংস্থাগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কিনা এবং তাদের কোনো অবহেলা ছিল কিনা, সেটা খতিয়ে দেখার প্রতি জোর দিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page