সোমবার- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

দাম বাড়ানোর প্রস্তাবেই অস্থির ভোজ্যতেল

দাম বাড়ানোর প্রস্তাবেই অস্থির ভোজ্যতেল

# সবজির দামও চড়া
# অপরিবর্তিত চাল-ডাল
# স্থিতিশীল মাছের বাজারও

দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে অস্থির হয়ে উঠছে ভোজ্যতেলের বাজার। বিক্রেতারা বাড়তি দামে বিক্রয় করছে ভোজ্যতেল। বিক্রেতাদের অভিযোগ, কারখানা ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় এ অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগরীর কয়েকটি খুচরা দোকানে দর যাচাই করে জানা গেছে, খোলা সয়াবিন ও সুপার পামঅয়েলের দাম লিটারে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। এদিন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা। আর সুপার পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা ১৬০ টাকায়।

খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম খুচরা পর্যায়ে এখনও না বাড়লেও পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। এ অবস্থায় আগামী সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

নগরীর আসকার দিঘির পাড়ের রাজীব স্টোরের মালিক রাজীব নাথ বলেন, দু‘দিন ধরে অর্ডার অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। পাঁচ লিটারের এক কার্টনের অর্ডার করেছিলাম। বৃহ¯পতিবার তিন বোতল পেয়েছি। এক লিটারের তেলের সরবরাহ দু-দিন ধরে একেবারেই বন্ধ। এখন আগের মজুতগুলো বিক্রি করছি। ফলে দাম একটু বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। সামনের সপ্তাহে কী হবে এখনও জানি না।

সম্প্রতি লিটারে ১০ টাকা দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বন¯পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সরকার এখনও অবশ্য তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। এ নিয়ে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার মধ্যেই অস্থির হতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের বাজার।

প্রসঙ্গত, গত ৩ আগস্ট থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দর প্রতি লিটার ১৮৯ টাকা, পাঁচ লিটার ৯২২ টাকা, খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটার ১৫০ টাকা নির্ধারিত আছে।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

চড়া সবজির দাম
বাজারে আসা শীতের সবজির মধ্যে ক্রেতার চাহিদা বেশি ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শিমের। এসব সবজি প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আগের মজুত থাকা এসব সবজি প্রতিকেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা অত্যন্ত চড়া।

এছাড়া বাজারে বেগুন ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা, বরবটি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় টমেটো ১০০- ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী, লাউ, মূলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিকেজি আলু মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর মিষ্টিকুমড়োর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনেপাতা প্রতিকেজি ১৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা আর শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহআলম বলেন, শিম, কপি এগুলো শীতের সবজি। সাধারণত ভাদ্র মাসের শেষদিক থেকে এগুলো বাজারে আসতে থাকে। এবারও মাত্র আসতে শুরু করেছে, তবে পরিমাণে খুবই কম। এজন্য দামও কিছুটা বেশি।

অপরিবর্তিত চাল-ডালসহ যেসব পণ্যের দাম
বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা আর বড় রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। ভারতের কেরালার আদা ১২০ টাকা, চীনের আদা ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে খুচরা দোকানে মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, আটাশ বালাম কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১২০ টাকা, চিনিগুঁড়া প্যাকেট ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ও খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যা অপরিবর্তিত।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

এছাড়া অন্যান্য মুদিপণ্যের মধ্যে বাজারে খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার মধ্যে সেনা, ডায়মন্ড, ফ্রেশ, আফতাবসহ বিভিন্ন র্ব্যান্ডের আটা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আর খোলা ময়দা ৫৫ টাকা, প্যাকেটজাত ময়দা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে কেজিপ্রতি নেপালি মসুর বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। আর মোটা দানার মসুর ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া প্রতিকেজি খোলা সাদা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, প্যাকেট চিনি ১২০ টাকা, লালচিনি ১১৫ টাকা, ছোট মুগডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

স্থিতিশীল মাছের বাজারও
মাছের মধ্যে নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে এক কেজি বা তার চেয়ে সামান্য বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২২০০ টাকায়। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। ছোট আকারের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য মাছের মধ্যে লইট্যা ও ফাইস্যা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শাপলা পাতা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচাঁদা ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

এছাড়া খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ছোট আকারের ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং পাঙাশ, সিলভার কার্প মিলছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে।

মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রয় হচ্ছে যে দামে
বাজারে সোনালি মুরগি প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি মোরগ ৬৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজন প্রতি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৮০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, বাজারে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও তা ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাজার যদি ভোক্তার অনুকুলে না থাকে তাহলে তাকে স্থিতিশীল বলা যায় না। আর সয়াবিনের দাম বাড়ানোর পক্ষে আমরা নই। কারণ বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামের এই পরিস্থিতিতেও ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠছে। বিষয়টি সরকারকেই বিবেচনা করে দেখতে হবে।

ঈশান/মখ/বেবি

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page