Skip to content

শুক্রবার- ৬ জুন, ২০২৫

দুদকের জালে চট্টগ্রামের কোটিপতি পুলিশ দম্পতিরা

পেশায় তারা পুলিশ কর্মকর্তা। ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী কমিশনার পর্যন্ত। ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানায়। এ সময় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তারা। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সেই সম্পদের বড় অংশ কাগজে-কলমে দেখিয়েছেন স্ত্রীর নামেও। তাতেও গোঁজামিলে ভরা। কলমের খোঁচায় তাদের ‘ব্যবসায়ী বা খামারি’ বলে পরিচয় দিলেও দুদকের অনুসন্ধানে তার কোন প্রমাণ মেলেনি।

এমন অন্তত একডজন ‘কোটিপতি’ পুলিশ দম্পতির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য মিলেছে।কারও কারও বিরুদ্ধে ইয়াবার কারবারে পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে এরইমধ্যে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মামলার সুপারিশসহ সাক্ষ্য-স্মারক কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও ধারাবাহিকভাবে মামলা দায়ের হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

দুদক সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে সর্বশেষ গত ৭ ও ৮ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে দুই পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে এক কোটি ৮৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে এএসপি এ বি এম শাহাদাত হোসেন মজুমদার ও তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে দুটি।

এছাড়া দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আবুল কাশেম চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনামুল হক বাদী হয়ে দুই পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে ওই তিনটি মামলা করেন।

এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশের আরেক ইন্সপেক্টর মীর নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহানা সুলতানার বিরুদ্ধেও পৃথক দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি করেন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন।

মামলায় মীর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৩৮ লাখ চার হাজার ৩৭৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। পৃথক মামলায় তার স্ত্রী শাহানা সুলতানা ও টিআই নজরুলের বিরুদ্ধে ৮৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৬১ লাখ ৮০ হাজার ৭৭৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। এসব মামলা এখনও দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট বহু বিতর্কিত ও বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার সাবেক ওসি পুলিশ ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে তিন ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন মামলা করেন। বিচার শেষে গত বছরের ২৭ জুলাই বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সি আব্দুল মজিদ ওই মামলার রায় প্রদান করেন। রায়ে প্রদীপ কুমার দাশকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি কারণকে ২১ বছরের কারাদন্ডের পাশাপাশি ওই দম্পতিকে চার কোটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই দম্পতি বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছেন।

দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিগত ২০১৯ সাল থেকে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ব্যাপারে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় তাদের কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর তারা সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। এরপর দুদক সেই বিবরণী ধরে অনুসন্ধানে নেমে তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অঢেল সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পায়। তাদের স্ত্রীদের নামেও কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংস্থাটির হাতে রয়েছে।

নগরীর কোতোয়ালী, বন্দর, পাহাড়তলী ও পাঁচলাইশ এবং জেলার বোয়ালখালী থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এরকম অন্তত আরও ছয়জন পুলিশ ইন্সপেক্টর ও তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য-উপাত্তসম্বলিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে সেসব কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের হতে পারে।

এ ব্যাপারে দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. নাজমুছ সাদাত বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এরইমধ্যে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাক আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। যাদের অনুমোদন মিলবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page