মঙ্গলবার- ২১ অক্টোবর, ২০২৫

নাবিকদের মুক্তিতে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দিল কেএসআরএম

৩১ দিন জিম্মি থাকার পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। সোমালিয়ার উপকূল থেকে মুক্ত হয়ে জাহাজটি রওনা দিয়েছে আরব আমিরাতের বন্দরের উদ্দেশে। সেখান থেকে নাবিকরা দুবাই হয়ে বিমান যোগে চট্টগ্রামে পৌঁছবেন।

নাবিকদের জিম্মি করা হয়েছিল মূলত মুক্তিপণের জন্য। শেষ পর্যন্ত সমঝোতার ভিত্তিতে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমেই যে নাবিকরা মুক্ত হয়েছেন সেটা পরিষ্কার। তবে কত ডলার বা টাকার বিনিময়ে তারা মুক্তি পেলেন এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কিংবা জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম কেউই মুখ খোলেনি।

রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে দুই পক্ষেরই সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা রয়েছে। সেখানে মুক্তিপণের অংক স্পষ্ট করে বলা হবে কি না তা জানা যায়নি। তবে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম পান্টল্যান্ড মিরর বলছে, লেনদেন হওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ পাঁচ মিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন :  ওমান থেকে কফিন বন্দি হয়ে ফিরল আট প্রবাসী

কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত মুক্তিপণে নাবিকদের মুক্ত করে আনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন। তবে তিনি সেখানে মুক্তিপণের অর্থের কোনো অংক উল্লেখ করেনি।

কত টাকা বা ডলারের বিনিময়ে নাবিকরা মুক্তি পেয়েছেন সেটা প্রকাশ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, ১৪ বছর আগে একই মালিকের এমভি জাহান মনি নামের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সেবারও তারা মুক্তিপণের অংক গোপন রাখে। এমনকি জলদস্যুরা কত ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে সেটাও পরিষ্কার করেনি কোনো পক্ষই।

এদিকে মুক্তিপণের অংক দস্যুদের হাতে কীভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তা নাবিকেরা জাহাজের ডেকে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনই একজন নাবিক তার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, ছোট উড়োজাহাজ থেকে জাহাজের পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। জাহাজের পাশে আগে থেকেই স্পিডবোটে করে অপেক্ষায় ছিল দস্যুরা। ডলারভর্তি ব্যাগ পানি থেকে সংগ্রহ করে দস্যুরা। এরপর প্রায় আট ঘণ্টা পর গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে যায়।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে ১৯৪ পোশাক কারখানা ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে

ওই নাবিক জানান, ডলারভর্তি ব্যাগ পানিতে ফেলার আগে নাবিকদের জাহাজের ডেকে নিয়ে এসে এক লাইনে দাঁড় করায় দস্যুরা। এ সময় পেছন থেকে নাবিকদের দিকে অস্ত্র তাক করে ছিল দস্যুরা। উড়োজাহাজ থেকে নাবিকদের প্রতি ইশারায় হাত তোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এরপর সব নাবিক হাত তোলেন। অর্থাৎ সব নাবিক জীবিত আছেন, এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই উড়োজাহাজ থেকে ডলার ফেলা হয়।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও জাহাজটিতে থাকা ২৩ জন নাবিক। বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছে। জাহাজটিতে থাকা নাবিকদের সবাই সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন :  বিদেশি সাইটে পর্নো ভিডিও দেওয়া সেই দম্পতি গ্রেপ্তার

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি দস্যুদের কবলে পড়েছিল।

নিজ দেশের উপকূলে নেওয়ার ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নানা পর্যায়ে দর-কষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছছিল বলে ঈদের আগেই আভাস দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page