রবিবার- ২০ এপ্রিল, ২০২৫

আজাদ হত্যায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ

প্যানেল মেয়র লিটনের ভাই খোকন আত্নগোপনে?

চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীতে আজাদুর রহমান আজাদ খুন হওয়ার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠা চট্টগ্রাম সিটির প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের ছোটভাই আবদুল মান্নান খোকন। তিনি এখন কোথায় রয়েছেন, সে ব্যাপারে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, খোকন বিদেশে পালিয়েছেন বলে তারা শুনেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকেই এলাকার কোথাও আবদুল মান্নান খোকনকে দেখা যাচ্ছে না। নেই কোনো দলীয় বা ব্যক্তিগত কর্মসূচিতেও। স্থানীয় কেউ কেউ বলছেন, খুনের ঘটনায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে নিহতের পরিবার বলছে, খোকনের গা ঢাকা দেওয়ার ঘটনায়ই প্রমাণ করে খুনের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল। না হয় তিনি পালাতেন না।

আজাদের খুনি আবুল হাসনাত রাজু ও ওসমান নামের দুই আসামিকে গত ৪ জুন গ্রেপ্তারের পর তাদের সঙ্গে খুনের আগে-পরে প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের ছোটভাই আবদুল মান্নান খোকনের সাথে যোগাযোগ থাকার তথ্য পায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এজন্য খোকনকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানায় ডিবি। কিন্তু ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেওয়ায় এখনো তাকে খুঁজে পায়নি ডিবি পুলিশ।

সরেজমিন পাহাড়তলী থানার হালিশহর নয়াবাজার এলাকাসহ ২৫ নং রামপুরা ওয়ার্ডে গিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে আবদুল মান্নান খোকনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আবদুল মান্নান খোকনের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

সেদিন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার সময় স্বজনরা জানতে চাইলে খুনিদের (আবুল হাসনাত রাজু প্রকাশ রাজু, ফয়সাল ও ওসমান) নাম বলে যান নিহত আজাদুর রহমান আজাদ।

আজাদের স্ত্রী ও স্বজনদের অভিযোগ, খুনিরা সবাই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র আবদুস লিটনের ছোটভাই আবদুল মান্নান খোকনের অনুসারী। খোকনের নেতৃত্বে তারা বিভিন্ন সময় এলাকায় চাঁদাবাজি ও মারামারি করে। ঘটনার পর আবদুল মান্নান খোকনসহ খুনিদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে নিহতের পরিবারের পাশাপাশি সোচ্চার হয়ে উঠে এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা প্রথমে সড়ক অবরোধ ও পরে খুনিদের খোকনের অনুসারী উল্লেখ করে বিচারের দাবিতে মিছিল বের করেন।

এ ঘটনায় আজাদের স্ত্রী নাজমা আক্তার বাদি হয়ে পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলায় আসামি করা হয়— ওসমান, রাজীব, রাজু ও ফয়সালকে। পরদিন রাঙ্গামাটি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর গত রোববার খুলনার পাইকগাছা থানার শোলাদানা এলাকা থেকে হালিশহরের মো.আবুল হাসনাত রাজু (৩৪) ও পানিরকল এলাকার মো. ওসমানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করেন উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম-বন্দর) মো. আলী হোসেন। খুনিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেছিলেন, খুনিরা আবদুল মান্নান খোকনের অনুসারী। হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে বিভিন্ন সময় খোকনের সাথে খুনিদের একটা যোগাযোগ আমরা দেখতে পেয়েছি। তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম-বন্দর) আলী হোসেন বলেন, ‘খুনিদের সাথে খুনের আগে-পরে আবদুল মান্নান খোকনের সাথে কথা হয়েছে। কী কথা হয়েছে তা জানার জন্য তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। দেশ ছেড়ে বিদেশ পালিয়েছে বলে শুনেছি, তবে নিশ্চিত নই। আমরা তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি, সে এখন বাসায় নেই। কিন্তু আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ ব্যাপারে নিহত আজাদুর রহমান আজাদের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, ‘আমিও এলাকার মানুষ থেকে শুনেছি আবদুল মান্নান খোকন দেশে নেই, বিদেশে পালিয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি যদি আমার স্বামী খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত না হন তাহলে তিনি পালাবেন কেন? আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি খুনিরা সবাই খোকনের অনুসারী। আমরা খুনিদের সাথে আবদুল মান্নান খোকনেরও বিচার চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার আগে ফয়সালের নামও বলে গিয়েছেন। ফয়সাল এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। ডিবি পুলিশ ওসমান ও রাজুকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের থেকে টমি ও ফাহিমের নাম জানতে পেরেছে। যদিও আমার স্বামী তাদের নাম বলে যায়নি। আমার স্বামী নাম না বলা স্বত্ত্বেও যদি টমি ও ফাহিমের নাম বের হয়ে আসে তাহলে তো খোকনের নামও থাকবে।’

এর আগে গত ২৮ মে ভোরে নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া নয়াবাজার মুজিবুর রহমান প্লাজার সামনে খুন হন নিরাপত্তাকর্মী আজাদুর রহমান আজাদ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর আবদুস সুবর লিটনের ছোট ভাই আবদুল মান্নান খোকনের বেপরোয়া-বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ভীতসন্ত্রস্ত ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকায় নিত্য চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায় খোকনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। তারা দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন দোকানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জুয়া ও মাদকের কারবার করে এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ আছে।

আব্দুল মান্নান খোকনের বিরুদ্ধে নগরের পাহাড়তলীর ভেলুয়ার দীঘিতে বড়শি প্রতিযোগিতার আড়ালে দিনে-দুপুরে জমজমাট জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, বড়শি প্রতিযোগিতার নামে এ জুয়ার আসরের আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন খোকন।

এর আগে ২০২১ সালের ৩ মে হালিশহর থানার ঈদগা বড়পুকুরপাড় এলাকার একটি অসহায় পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ উঠে আবদুল মান্নান খোকনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন খোকন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিজে উপস্থিত থেকে কিশোরগ্যাং দিয়ে প্রকাশ্যে ওই পরিবারের উপর হামলা চালান খোকন। এসময় একটি রিকশা গ্যারেজ এবং ঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগীরা।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page