শুক্রবার- ১৪ মার্চ, ২০২৫

ফ্যাসিস্টের দোসর চসিকের সিইও তৌহিদুলের অঢেল সম্পদ!

ফ্যাসিস্টের দোসর চসিকের সিইও তৌহিদুলের অঢেল সম্পদ
print news

ফ্যাসিস্টের দোসর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদ থাকার অভিযোগ গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অভিযোগে তার স্ত্রীর নামে বার্জ, কার্গো জাহাজ, ট্রলারসহ কোটি কোটি টাকার জমি ক্রয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

চসিকের বিভিন্ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, নিজ ও আত্নীয় স্বজনের নামে কোটি কোটি টাকা স¤পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) চট্টগ্রাম-১-কে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে দুদকের প্রধান কার্যালয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আদেশ দেন।

অভিযোগটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য কমিশন কর্তৃক সীদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয় ওই চিঠিতে। অভিযোগে বলা হয়, সিটি কর্পোরেশনের সিইও শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।

তার বাবা চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারি ছিলেন। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় তারা সপরিবারে থাকতেন। একসময় নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সংসারে টানাপোড়ন ছিল। এখন তিনি বিপুল স¤পদের মালিক।

অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আত্নীয় স্বজনদের চাকরি দিয়েছেন। তিনি সিটি কর্পোরেশনে যোগদানের পর থেকে ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফাইলে বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নেন। দপ্তরে ফাইল গেলেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন। এসব বিষয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও বহাল তবিয়তে থেকে যান তৌহিদুল।

অভিযোগে আরও বলা হয়, তৌহিদুল ইসলামের দপ্তর যেন একটি টাকা আয়ের কারখানা। তিনি সীমাহীন দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুপ্তচর ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের সাফল্য ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছেন। প্রতিটি ফাইলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করে বিভিন্ন স্তরের সুবিধাভোগীদের মুঠোফোনে কল দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় তিনি। ফলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তার এমন বিরামহীন দুর্নীতির ফলে সিটি কর্পোরেশনের সুনাম ও খ্যাতি হারানোর পাশাপাশি জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে।

অভিযোগে দাবি করা হয়, তৌহিদুল ইসলাম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে থেকে স¤পদের পাহাড় গড়েছেন। নামে-বেনামে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট, নগদ টাকা ছাড়াও নিজ স্ত্রীর নামে রয়েছে ২টি বার্জ, ৩টি ট্রলার, একটি কার্গো জাহাজ। স্ত্রীর নামে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের লিজ দলিল নং- ২৪৯ মূলে ৭ মে ২০১৮ সালে চান্দগাঁও মৌজার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন অনন্যা আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম এর অন্তর্গত ৫ কাঠা বা ৩৫৯৮.৫৬ বর্গফুট আয়তনের এ-২৫৯ নং প্লট ৯৯বছর মেয়াদে লিজ গ্রহণ করেন।

নিজ নামে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, চট্টগ্রাম এর দলিল নং-৭১৪৫ মূলে ২১ জুন-২০২১সালে খুলশী থানার খুলশী মৌজার চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের লে-আউট প্ল্যানের প্লট নং-১/সি নির্মিত ফজুন ভিস্তা নামে এপার্টমেন্ট ভবনের অবিভক্ত ও অচিহ্নিত ০.৭৪ শতক ভিটি ভূমি এবং ওই এপার্টমেন্ট ভবনের ৫ম(সি-৭) তলার পশ্চিমাংশে বি-টাইপ এপার্টমেন্টের পরিমাণ ২৩৫০বর্গফুট এবং নিচ তলার গাড়ি পার্কিং ¯েপস ১৬৫বর্গফুটসহ মোট ২৫১৫ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট ক্রয় করেন।

তার স্ত্রীর নামে সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিস, চট্টগ্রামের দলিল নং-৩০৪৫ মূলে ১৫ জানুয়ারি-২০২২ সালে ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ মৌজার ১০ শতাংশ বা ৫ গন্ডা জায়গা ক্রয় করেন। পরে ওই জায়গার উপর ১০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করেন। যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা। তার নিজের নামে একটি জিপ গাড়ি ও একটি টয়োটা-এফ প্রিমিয়ো গাড়ি রয়েছে।

এছাড়া স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের ব্যবহারের জন্য একটি প্রাইভেট কার ও একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে তার টাকার হিসেব গোপন রাখতে গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়িতে তার ভাইয়ের নামে প্রায় ২০ বিঘা জমি কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য ১২ কোটি টাকা। আপন ছোট ভাইয়ের নামে সদর জয়েন্ট পাহাড়তলী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, চট্টগ্রামের দলিল নং-৩৫৪২, ২৪ ফেব্রুয়ারি-২০২৩ সাল মূলে পাহাড়তলী থানার উত্তর হালিশহর মৌজার ৬০শতক নাল জমি কিনেছেন। অনুসন্ধানে নিজ নাম ও পরিবারের সদস্যদের নামে প্রচুর অবৈধ স¤পদ পাওয়া যাবে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সিইও শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি তার জানা আছে বলে সব অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, আরও কতোকিছু হবে? দুদকের তদন্ত করতে হবে কেন, আপনারাও তদন্ত করে দেখেন। আমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে বলে দিব, আপনাদের সব তথ্য দিতে। ওখানে দলিল নম্বরতো আছে, আপনারা যাচাই করে দেখেন।

তার কোনো ছোট ভাই নেই জানিয়ে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগে আমি প্রথমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও পরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলা হয়েছে। আপনারা তদন্ত করে দেখেন আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত। আশা করি সব জানতে পারবেন।

ঈশান/মখ/মসু

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page