Skip to content

বৃহস্পতিবার- ৫ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ

বন্যায় ক্ষতি তেমন কিছুই না, সব গণমাধ্যমের অপপ্রচার

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের ক্ষতি তেমন কিছুই না, এই ক্ষত নির্মাণ হবে নিমিষেই। শুধু তাই নয়, যেখানে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে আরও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এ জন্য কোনো বরাদ্দও বাড়বে না। নির্ধারিত বরাদ্দের মধ্যে এসব করা হবে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে টানা অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রকল্পের যা ক্ষতি হয়েছে, তার অধিক অপপ্রচার হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমগুলোর খবর দেখে মনে হয়েছে রেলপথ ভেসে গেছে। রেললাইন বেঁকে গেছে, সবকিছু যেন ধ্বংস হয়ে গেছে। আসলে কিন্তু তা নয়। এখানে শুধু কিছু লোহা ভেসে গেছে, এটা আমরা রিপ্লেস করে দেব। এটা আমাদের কাছে পর্যাপ্ত আছে, এটা রিপ্লেস করা কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার মাত্র।

তিনি বলেন, অতি ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নির্মাণাধীন রেললাইনের সাতকানিয়া অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাথর ও মাটি সরে গিয়ে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহানী এলাকায় রেললাইন বসে যায়। পর্যাপ্ত সংখ্যক কালভার্ট না থাকায় পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি রেললাইনে বাধা পেয়ে সরে যেতে পারেনি।

তবে ওই রেলপথে যেখানে ১৪৫টি সেতু ও কালভার্ট করার কথা ছিল সেখানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রয়োজন মনে হওয়ায় মোট ১৭৩টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। মূল প্রকল্পের চাইতেও চল্লিশের বেশি কালভার্ট করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি ও কাজ করতে গিয়ে আমরা সংখ্যা বাড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার আমরা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদের্শন করেছি। এতে আমরা ভাবছি এখানে আরও কিছু কালভার্ট করে দেব। পরের বছর হয়ত এরকম পানি হতেও পারে অথবা আগামী ২০ বছর পরেও এরকম পানি আসতে পারে; এটাতো আনপ্রেডিক্টেবল।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ক্ষতি হয়েছে ৫০০ মিটার জায়গায়। একটানা কোথাও হয়নি। মূল যে লাইনের স্ট্রেন্থ, এটার কোথাও ক্ষতি হয়নি। এজন্য আমি সরেজমিনে দেখতে আসছি। মনে হচ্ছিল পত্রিকার রিপোর্ট দেখে যে, অ্যামব্যাংকমেন্ট ভেসে চলে গিয়েছে ভেঙে- এ রকম কিন্তু না।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রেললাইনের নিচে পানি ঘুরপাক খেয়ে এটা হয়েছে। আমাদের টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। তাদের সঙ্গে বসব। কারিগরি দিক দিয়ে সমাধান কী, এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। যেহেতু আমি তাদের সঙ্গে এরপরই বসব। তারাই জানাবে এর কারণ কী এবং সলিউশন কী।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনসের এমডি আব্দুল করিম ভূঁইয়া বলেন, মাত্র ৫০০ মিটার জায়গা থেকে পাথর সরে গেছে, স্রোতের টানে। পাথর রিপ্লেস হয়ে যাবে। যে জায়গায় পাথরের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এগুলো আমরা মেরামত করে ফেলব। এটা খুব সময়ের বিষয় না। এটার জন্য পুরো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় পাহাড়ি ঢলে পাথর ও মাটি সড়ে যাওয়ায় নির্মাণাধীন কক্সবাজার রেললাইনে নিচে এখনো পানি জমে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামত কাজ শুরু করতে পারিনি। টেকনিক্যাল টিমের সাথে তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত দেবেন কখন মেনটেইনেন্স শুরু হবে। আমরা যদি মেনটেইনেন্স শুরু করতাম, তাহলে এতদিনে শেষ হয়ে যেত।

এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কারণে ১০ দিন কাজ করা যায়নি। এখন আমরা দিনরাত কাজ করছি। আমাদের যে টার্গেট, অক্টোবরে ওপেনিং। সেই টার্গেট থেকে আমরা পিছায়নি। আমরা কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, একটা বিষয় আপনারা জানেন, বড় আকারের বন্যার কারণে অনেক সময় সড়ক, কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বলে কাজ বন্ধ থাকে না। ৫-১০ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো মেনটেইনেন্স করে ফেলা যায়। গত ১০০ বছরের মধ্যে এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি। যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই ভেবেচিন্তে কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কনসালটেন্ট এবং সংশ্লিষ্টরা।

প্রশ্নের জবাবে আব্দুল করিম ভ‚ঁইয়া বলেন, সরেজমিনে দেখেন আপনারা। ছবিগুলো নেন। এখানে কোনো স্লিপারও বাঁকেনি, রেললাইনও বাঁকেনি। এখানে ব্যালাস্টের স্লিপার স্লিপার থাকে, স্লিপারের ওপর রেললাইন থাকে। ব্যালাস্ট সরে যাওয়াতে স্লিপার বসে গেছে। বসার কারণে রেললাইন বসে গেছে। এটা যদি আপনারা অ্যাঙ্গেলে ছবি নেন, তখন মনে হবে রেললাইন বেঁকে গেছে। এখন আপনারা এবং আমরাও রেললাইনের পাশে আছি। আপনারা দেখেন কোথাও কিন্তু রেললাইন বাঁকেনি।

ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেল সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, এটা সারাদেশের মানুষের স্বপ্ন এবং প্রধানমন্ত্রী এটা নিশ্চিত করতে চান কোনো কিছুর জন্য যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। ভবিষ্যতে যেন এ রকম না হয়।

সচিব বলেন, শুনেছি এ এলাকায় নিকট অতীতে এরকম পানি কখনও হয়নি, কেউ দেখেনি। আমাদের যে কোনো প্রকল্প করার আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করি। গত ১০০ বছরে নদীর গতিপথ, জোয়ার-ভাটা কেমন হয়, জীববৈচিত্রে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা—সামগ্রিক বিষয়টা নিয়েই প্ল্যানিংটা করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবীর বলেন, এই প্রকল্প তো আগামী একশ বছরের হিসেবে করেই করা হয়েছে। আমাদের এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আপাতত দৃষ্টিতে যাতে কখনো জনদুর্ভোগ ভবিষ্যতে না হয়, এজন্য যদি প্রয়োজনে আরও উঁচু করা লাগে- ব্যালাস্ট (রেললাইনে থাকা পাথর) তাহলে উঁচু করা হবে। যেখানে কালভার্ট করতে হবে, সেখানে কালভার্ট করে কাজগুলো দ্রুত শেষ করা হবে। এখনো তো ওয়েল্ডিং হয়নি। যে কাজগুলো বাকি, আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের দিকে ট্রায়াল রানে যাব। তারপরেই অক্টোবরের শেষে উদ্বোধন করা হবে।

বন্যার কারণে রেললাইনের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ব্যয় বাড়বে কিনা—এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, ব্যয় সীমা বাড়বে না। যে ব্যয় নির্ধারণ রয়েছে, তার মধ্যেই করা হবে। টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে বৈঠকের পর সংস্কার কাজের সিদ্ধান্ত হবে।

প্রসঙ্গত, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। সেখান থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যক নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে।

আর রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৮.৭৫২ কিলোমিটার রেলপথ। ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ামার সংলগ্ন ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। আগামী বছরের জুনে শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page