Skip to content

শুক্রবার- ৬ জুন, ২০২৫

মসলার ঝাঁজে কোরবানির আঁচ

এবার অস্থির হতে শুরু করেছে মসলার বাজার। জিরা, ধনিয়া, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতার দাম সম্প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। মসলার এই ঝাঁজে মিলছে কোরবানির ঈদের আঁচ। এ নিয়ে ক্রেতারা বেশ উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়া, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রাখা এবং সরবরাহ কমে যাওয়ায় মসলার দাম বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহ আগেও ৩২০ টাকায় প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হয়েছিল। রোজার ঈদে পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল ৬৫০ টাকায়। বর্তমানে প্রতিকেজি জিরার দাম ঠেকেছে ৭৩০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার কেজিতে দাম বেড়েছে ৮০ টাকা।

একইভাবে কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ধনিয়াে এখন ১৯০ টাকা, কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গোল মরিচ ১ হাজার টাকা, কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দারুচিনি ৫৫০ টাকা, কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে তেজপাতা ২০০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি সরিষা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মেথি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, আলু বোখারা ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, কিশমিশ ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকা, কাঠবাদাম ৭৪০ থেকে ৭৬০ টাকা, কাজু বাদাম ৮২০ থেকে ৯৫০ টাকা, পেস্তা ২ হাজার ৬৬০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা ও পাঁচফোঁড়ন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লবঙ্গ-এলাচের দাম। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি লবঙ্গ ৩০০ টাকা ও এলাচ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি এলাচ ২ হাজার ৬০০ টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত।

রোজার ঈদে খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগেও প্রতিকেজি আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুনের কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

এদিকে গত ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি। তাই বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পেঁয়াজ নেই। রোজার শেষদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকা কেজিতে। সপ্তাহখানেক আগেও পণ্যটি ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

তবে খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও স্থলপথে টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমার থেকে আদা আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের আদা নেই। তবে চীন থেকে আমদানি করা এক কনটেইনার আদা গত মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে বেশ কয়েকটি কনটেইনার আদা। আর ভিয়েতনাম থেকেও আসছে আদা। সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কমে যাওয়ার আশ্বাসও দেন তারা।

যেসব দেশ থেকে আসে মসলা :

হলুদ, মরিচ, মেথি, কালিজিরা, তেজপাতা, আদা, রসুন, সরিষা, পেঁয়াজ, ধনিয়াসহ অধিকাংশ মসলার বাজার আমদানিনির্ভর। এসব মসলার কিছু অংশ দেশে উৎপাদিত হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তাই দেশের মসলা বাজার ৮০ ভাগই বিশ্ববাজারের উপর নির্ভরশীল।

খাতুনগঞ্জে ভারত, চীন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, গুয়েতেমালা, মাদাগাস্কার, আরব আমিরাতসহ বেশকিছু দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এখানে মসলাপণ্য আমদানি করা হয়।

এরমধ্যে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এলাচ এবং মিসর, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া থেকে জিরা আমদানি হয়। চীন ও ভিয়েতনাম থেকে দারুচিনি এবং শ্রীলঙ্কা, কমোরোজ দ্বীপ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে লবঙ্গ আমদানি হয়। এদিকে ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে রসুন এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মাদাগাস্কার থেকে আদা আমদানি হয়। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড থেকে গোলমরিচ আমদানি হয়।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেটের সাধারণ সম্পদক মো. ইদ্রিস বলেন, আমাদের দেশে চীনের আদা ও রসুনের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু দু’সপ্তাহের ব্যবধানে সেখানে বুকিং রেট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বর্তমানে এই দুই পণ্য টনপ্রতি দুই হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছেছে। বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরাও বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি আমাদেরকে এখন শুধুমাত্র দেশি পেঁয়াজের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাই দাম বেড়ে গেছে। তবে সরবরাহ বেড়ে গেলে মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, ব্যবসায়ীরা যতই বলুক সরবরাহ বাড়লে মসলার দাম কমে যাবে; কিন্তু কোরবানের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে বাড়তি দামে মসলা বিক্রি করবেন। শুকনা মরিচ আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। অথচ এটিও বাড়তি দরে বিক্রি হয়। তাই প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এখন থেকে বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, রোজার ঈদে আমরা প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করেছি। কোরবানির ঈদেও আমরা সে ধারা বজায় রাখবো। বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে আমরা আমদানি মূল্য, বিক্রয়মূল্য সবকিছু খতিয়ে দেখবো। কোন প্রকার কারসাজি পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page