শুক্রবার- ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত

মানবিক কাজের কারণে চাকরি হারালেন পুলিশ সদস্য শওকত

সড়কের ফুটপাত বা হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকা নাম-পরিচয়হীন বেওয়ারিশ অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো কাজের কারণে চাকরি হারালেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কনস্টেবল শওকত হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপির উপকমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারীশ। তিনি বলেন, কনস্টেবল শওকত হোসেন টানা ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় বিভাগীয় মামলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সশরীরে হাজির হয়ে শওকত পুলিশের চাকরির চেয়ে মানবিক কাজকে অগ্রাধিকার দিবে বলে জানান।

সেই আলোকে গত ১৬ এপ্রিল শওকত হোসেনের চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা। তবে শওকত চাইলে এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বরাবর আপিল করতে পারেন।

আরও পড়ুন :  ধরপাকড় শুরু, পুরুষশূন্য জোবরা গ্রাম

শওকতের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করেছেন কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী। তিনি বলেন, কর্মস্থলে ছুটি ছাড়া ৭১ দিন অনুপস্থিতির বিয়টি আমি তদন্ত করেছি। ছুটি ছাড়া ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি কোনো প্রকার মেডিকেল সার্টিফিকেট বা ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। আমি সেই আলোকে প্রতিবেদন দিয়েছি। বাকিটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়।

চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়েছে, ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত শওকত হোসেন শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়া মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

আরও পড়ুন :  আগস্টে লুট হওয়া অস্ত্র শনাক্ত করা যাচ্ছে না

শওকত হোসেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা। ২০০৫ সালে তিনি পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে রাঙামাটি বদলি হন। সেখান থেকে তাকে বলদি করা হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। সেই থেকে তিনি সিএমপিতে আছেন।

চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স স¤পন্ন করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন।

তার এই কাজটি পুলিশের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০১৯ সালে সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মাহবুবুর রহমান তার সাথে আরও ১০ সদস্য যুক্ত করে সিএমপির মানবিক ইউনিট চালু করেন এবং আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি একটা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করেন।

আরও পড়ুন :  আমানত থেকে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক!

সর্বশেষ শওকত সিএমপির কর্ণফুলী থানায় বদলি হন। কর্ণফুলী থানায় কনস্টেবল পদে সাধারণ ডিউটি করে দিন পার করলেও সুযোগ পেলেই মহানগরীর বেওয়ারিশ রোগীদের সেবা দেওয়া অব্যাহত রাখেন শওকত। দুদিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন শওকত। মাঝে অসুস্থ হয়ে পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সর্বশেষ কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে তাকে চাকুরি থেকে ডিসমিসের (বরখাস্ত) আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন