Skip to content

বৃহস্পতিবার- ৫ জুন, ২০২৫

মুনিয়া খুনের ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের শাস্তি দাবি তানিয়ার

সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও অপতৎপরতার অভিযোগ

মুনিয়া ‘খুনে’র ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের

লেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া ‘খুনে’র ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন মুনিয়ার পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে মামলার বাদীর নিরাপত্তামুনিয়া ‘খুনে’র ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের মুনিয়া ‘খুনে’র ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের মুনিয়া ‘খুনে’র ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের মুনিয়া ‘খুনে’র ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের র দাবিও জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলেছেন মোসারাত জাহান মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনভীরের বিরুদ্ধে মোসারাতকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে তোলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারে বাধা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নুসরাত জাহান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে মোসারাত হত্যার বিচার দাবি করেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মুনিয়ার বড় বোন অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবাহানসহ হত্যায় জড়িতদের প্রতি প্রভাবিত হয়ে ছাড় দিয়েছেন তদন্তকারীরা। মামলার আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্র, তদন্তকারী কর্মকর্তা এমনকি আদালতকেও ম্যানেজ করে মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন সায়েম সোবাহান।

সংবাদ সম্মেলনে কোনো কোনো সাংবাদিক কলেজছাত্রী মোসারাতের বিলাসবহুল জীবন নিয়ে প্রশ্ন তুললে নুসরাত জাহান বলেন, ‘আপনাদের প্রশ্ন করার জন্য আমার খারাপ লাগছে না। তবে আপনারা যেসব প্রশ্ন করছেন, তার সিন্ডিকেট হচ্ছে আনভীর।’

নুসরাত জাহান বসুন্ধরার মালিকাধীন গণমাধ্যমে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছিলাম, ওই ব্যক্তি কোনো একটা প্রোগ্রামে মোসারাতকে নিউজ টোয়েন্টিফোরে সংবাদ উপস্থাপনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি শুনে বোনকে নিষেধ করেছিলাম। আমি বলেছি, এইচএসসি শেষ হওয়ার পর যেন সেটা করে।’

ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে আনভীরের সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয় বলেও দাবি করেন নুসরাত জাহান। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, কিছু কিছু সাংবাদিক কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। এরপর কেঁদে ফেলেন নুসরাত জাহান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তো আপনাদের সাহায্য চাইছি।’

নুসরাত জাহান বলেন, আনভীর আপস–রফা করতে তাকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। মোসারাতকে খুন না করলে কেন টাকার প্রস্তাব দিলেন? কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাকে মেরে ফেললেও তিনি বিক্রি হবেন না।

বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন উল্লেখ করে নুসরাত জাহান কিছু সাংবাদিকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বোনের ভুল ছিল। কিন্তু আপনারা যেটা করেছেন, সেটা অন্যায়। সে অন্যায় করেনি। আপনাদের তাকে ক্ষমা করা উচিত। আপনারা দেখছেন, আমি আদালতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। আমার ওপর হুমকি আসছে। এতেও আপনাদের বিবেক নাড়া দিচ্ছে না?’

একটি জাতীয় দৈনিকের নাম উল্লেখ করে নুসরাত জাহান দাবি করেন, ওই পত্রিকার কুমিল্লা প্রতিনিধি ২০ কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন। মামলা তুলে নিলে ২০ কোটি টাকা দেবেন তাঁকে—এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে গিয়েছেন? এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নুসরাত জাহানের আইনজীবী বলেন, সেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা আছেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘মোসারাত হত্যার বিচারের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্র, তদন্তকারী সংস্থা ও বিচারালয় জড়িত। আজকের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, যে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছেন, এ ধরনের ঘটনা তাদের জানার দরকার আছে। ন্যায়বিচার পাওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিচার পেতে নাগরিক চাপও জরুরি।’

২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটে মুনিয়া একাই থাকতেন। তিনি একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন। মৃত মুনিয়া কুমিল্লা সদরের দক্ষিণপাড়া উজিরদিঘি এলাকার মৃত শফিকুর রহমানের মেয়ে।

ওই রাতেই তার বড় বোন নুসরাত বাদী হয়ে গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। এতে ওই বছরের জুলাইয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। ওই বছরের ১৮ আগস্ট পুলিশের দেওয়া ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। আদালতের আদেশে মামলা থেকে অব্যাহতি পান একমাত্র আসামি সায়েম সোবহান।

পরে মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে বোন নুসরাত জাহান ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ নালিশি মামলা করেন। সেখানে সায়েম সোবহান আনভীরসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়। এটি আমলে নিয়ে আদালত গুলশান থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।

নুসরাত জাহান মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, দুই বছর আগে সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে মোসারাত জাহান মুনিয়ার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এর মধ্যে ২০১৯ সালে মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আনভীর। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে ওই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। এর পর আনভীরের মা মুনিয়াকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। পরে কুমিল্লা থেকে ডেকে এনে এ বছরের মার্চে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন আনভীর।

এর মধ্যে বোন মুনিয়ার মাধ্যমে বাদী নুসরাত জানতে পারেন, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ দেশে থাকলে আসামির মা-বাবা মুনিয়াকে মেরে ফেলতে পারেন। গত ১ মার্চ থেকে আসামি আনভীর মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল মুনিয়া তার বোনকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবে না, শুধু ভোগ করেছেন। সে তাকে ধোঁকা দিয়েছে। যে কোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, নুসরাত আত্মীয়স্বজন নিয়ে গুলশানের বাসায় পৌঁছে দেখেন ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। পরে মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন- তার বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোবারঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছে। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page