
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের সন্দীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষত বদিউল আলমের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনার পর ওই শিক্ষককে স্কুলের পাঠদান থেকে সাময়িক বিরত রাখা হয়। তবে স্থানীয়ভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর।
সোমবার (১৪ জুলাই) অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, গত ১ জুলাই (মঙ্গলবার) চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বিষয়ে পাঠদানকালে ২টা থেকে ২টা ৪৫ মিনিটের পিরিয়ডে উক্ত ছাত্রীকে অন্যান্য শিক্ষার্থীর সামনে যৌন হয়রানী করে।
রবিবার (২ জুলাই) রবিবার সকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে স্কুলের প্রদান শিক্ষককের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর অভিভাবক। বিষয়টি জানাজানির পর অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমকে স্কুলের পাঠদান থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। পরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার। জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ের সাথে ক্লাস চলাকালীন যৌন নিপীড়ন করেছে শিক্ষক বদিউল আলম। এর আগেও সে একাধিকবার এমনটাই করেছে। প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি মহল আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে বিষয়টি জানাজানি না হয়। মূলত বারবার এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সে সাহস পেয়েছে। আমরা চাই, তাকে চাকরিচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, সন্দীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম বিভিন্ন সময় স্কুলের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিল। লোকলজ্জায় বিষয়টি গোপন থেকে যায়। চলতি মাসের ১ জুলাই ক্লাস চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীকে ¯পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। ভিকটিম ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ না করলেও বাড়ীতে এসে বিষয়টি তাঁর মাকে জানান। পরদিন (২ জুলাই) রবিবার সকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ওই শিক্ষার্থীর মা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বদিউল আলমের বিরুদ্ধে পূর্বেও অনুরূপ অভিযোগ ছিল, তবে প্রতিবারই তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় পাড় পেয়ে যান। এবারও তাদের অভিযোগ, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারটির ওপর নানা চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এক অভিভাবক বলেন, এটা প্রথম নয়। আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই শিক্ষক, কিন্তু কেউ সঠিক তদন্ত না করায় তিনি বারবার করার সাহস পাচ্ছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো পর্যন্ত উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হিন্দোল বারী জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে বিস্তারিত জেনেছি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের ১৪ জুলাই সোমবার বিকাল ৫টায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আবেদন করেছি। এমন আচরণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বরাবরই কঠোর। স্থানীয়ভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন সংবেদনশীল ধামাচাপা অন্যায়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষকের দ্রুত অপসারণ ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেন, স্কুলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা চাই। যারা শিশুদের সাথে এমন জঘন্য অপরাধ করে, তাদের কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় যাবে ?
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।