সোমবার- ৩০ জুন, ২০২৫

রেলের সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়ম ‘ইনক্রিমেন্ট হেল্ডাফ’ সিসিএফের

পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দিতে ওটিম ভেঙে করলো এলটিএম, দামও বেশি বাজারের চেয়ে

রেলের সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়ম ‘ইনক্রিমেন্ট হেল্ডাফ’ সিসিএফের

রেলের সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়মের দায়ে ইনক্রিমেন্ট হেল্ডাফের শাস্তি পেলো বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএফ) মো. বেলাল হোসেন সরকার। আগামী এক বছরের জন্য তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

গত ১৮ জুন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম এ আদেশ জারি করেন। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক পদে থাকাকালীন অনিয়মের কারণে এই শাস্তি পান মো. বেলাল হোসেন সরকার।

আদেশে বলা হয়, বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে মালামাল কেনা এবং পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিতে তিনি প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার প্রক্রিয়া এড়িয়ে যান এবং মান যাচাই না করেই মালামাল গ্রহণ করেন তিনি। রেলওয়ের তদন্তে উঠে আসে এই তথ্য।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটি বাজারদরের চেয়ে বেশি দর দেখিয়ে প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করে দপ্তরে পাঠায়, যা যাচাই না করেই অনুমোদন দেন মো. বেলাল হোসেন সরকার।

এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড) পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও তিনি এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডার মেথড) পদ্ধতি বেছে নেন, যেখানে কেবল রাজশাহীর ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের এফএ অ্যান্ড সিএও-কে দেখিয়ে এই টেন্ডার নোটিশ জারি করা হয়।

টেন্ডারে তালিকাভুক্ত ১৭৯ ঠিকাদারের মধ্যে কেবল মেসার্স আলমগীর ট্রেডার্স, মো. আনোয়ার হোসেন রাজা, মেসার্স শাহ রুপস ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আশা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জীবন এন্টারপ্রাইজ এবং মো. দিয়ারুল ইসলাম নামের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বাকি ১৭৩ ঠিকাদার এবং স্থানীয় দপ্তরগুলোকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি নোটিশ বোর্ডেও কোনো টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি, যা সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নীতির পরিপন্থী।

সংশ্লিষ্ট টেন্ডারের আওতায় সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন আসবাবপত্র, যেমন-সোফাসেট ও স্টিল চেয়ার। তবে চুক্তির শর্ত মোতাবেক এসব পণ্যের গুণমান যাচাই না করেই গ্রহণ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন সরকার।

তদন্তে প্রমাণিত এসব অভিযোগ পাওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব আ. স. ম আশরাফুল আলমকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি তদন্ত প্রতিবেদনে জানান, সরাসরি দুর্নীতির প্রমাণ না মিললেও, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও প্রক্রিয়াগত অবহেলা সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অবহেলার কারণে নিয়মবহির্ভূত পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থান থেকে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী, এটি কর্তব্যে অবহেলা, যা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য।

নথিপত্র পর্যালোচনার পর এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) ধারায় অসদাচরণ-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। সেই অনুযায়ী, বিধিমালার ৪(২)(খ) ধারায় তাকে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি পরবর্তী ০১ (এক) বছরের জন্য স্থগিত” রাখা হয়েছে।

এই আদেশ অনুযায়ী মো. বেলাল হোসেন সরকার স্থগিতকৃত বর্ধিত বেতনের কোনো বকেয়া পাবেন না এবং এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরবর্তী বছর থেকে বর্ধিত বেতন প্রাপ্য হবেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে আরও কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. বেলাল হোসেন সরকারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। হোয়্যাটস অ্যাপের মেসেজ অপশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন লিখে প্রেরণ করা হলেও তিনি কোন উত্তর পাঠাননি।

ঈশান/মখ/মসু

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page