
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ওয়্যারহাউসে পঁচে গেলে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে আসা প্রবাসীদের বিপুল পরিমাণ পণ্য। যা খালাস নিতে হলে প্রবাসীদের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অনাপত্তিপত্র (ক্লিয়ার পারমিট সংক্ষেপ সিপি) চেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
গত জুন মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মো. আহসান উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই অনাপত্তিপত্র দাখিলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৩০ দিনের মধ্যে অনাপত্তিপত্র দাখিল করতে না পারলে এসব পণ্য কাস্টমস আইন অনুযায়ী নিলামে চলে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের ভাষ্য, প্রবাসীরা ৩ থেকে ৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে তারা পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে জমিয়ে রাখে। যাতে দেশে যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য ওইসব পণ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া যায়। তবে দিন দিন প্রবাসীদের কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের আনা পারিবারিক ব্যবহারের কার্গো পণ্য ও কার্গো ফ্লাইট চিরতরে বন্ধ করে দেবার চক্রান্তের অংশ হিসেবে সিপি দাখিলের এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসীদের দাবি, গত রমজান ও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় ও কসমেটিকস সামগ্রী পাঠালেও সেগুলো খালাস নিতে পারেনি। এসব সামগ্রী খালাস নিতে সিপি নেওয়া সংক্রান্ত কাস্টমসের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে গত ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে চিঠি প্রেরণ করেছেন ভুক্তভোগী প্রবাসীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মো. আহসান উল্লাহ বলেন, মূলত প্রবাসীদের চালানে একশ কেজির বেশি পণ্য থাকায় ওইসব চালানের পণ্য খালাস বন্ধ রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অনাপত্তিপত্র চাওয়া হচ্ছে।
পচে গলে নষ্ট হচ্ছে পণ্য :
প্রবাসীদের পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্টদে মতে, শাহ আমানত আর্ন্তাতিক বিমান বন্দর থেকে প্রবাসীদের পণ্য খালাস নিতে না পারায় প্রতিদিন বাড়ছে বিমানবন্দরের ওয়্যারহাউস চার্জ। এমনকি দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় পচে গলে নষ্ট হচ্ছে প্রবাসীদের আনা ২৫ টন পণ্য। একই কথা বলেছেন প্রবাসীরাও।
এর মধ্যে শনিবার (২২ জুলাই) সকালে পণ্যের ব্যাগেজ ছাড়াতে আসা চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকার প্রবাসী ফোরকান হোসেন বলেন, গত রমজানের ঈদে আমি সৌদি আরব থেকে পরিবারের জন্য কাপড়-চোপড়ের সাথে কসমেটিকস সামগ্রী কিনে এনেছি।
কিন্তু ব্যাগেজের ওজন ১০০ কেজির বেশি হওয়ার কথা বলে আমার জিনিসপত্র আটকে রাখে। জিনিসপত্রগুলো ছাড়াতে প্রায় বিমানবন্দরে ছুটাছুটি করলেও ছাড় পায়নি। এসব জিনিসপত্র এখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে প্রায় নষ্টের পথে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের ওমান প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাগেজে একশ কেজির বেশি পণ্য হলে ওমান বিমান বন্দরে শুল্ক নিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু দেশে আমরা এই ছাড় পায় না। আমরা কোন দেশের নাগরিক ভাবতে অবাক লাগে। গত রমজানে আনা পণ্য এখন নষ্টের পথে বলে জানান তিনিও।
এ সময় বিমান বন্দরে থাকা চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডীর দুবাই প্রবাসী নজরুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের দুবাই প্রবাসী আমিরুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের নুরজাহান বেগমও একই কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কমেছে বিমান বন্দরের আয় :
বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দরের সক্ষমতার বড় একটি অংশ কার্গো পরিবহন। কিন্তু কার্গো খালাস বন্ধ থাকায় কোরবানির ঈদের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পণ্যবাহী কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বাংলাদেশ বিমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের আয় কমেছে।
গত কয়েক মাসে অন্তত ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে দাবি করে দুটি বিদেশি বিমান সংস্থা। কার্গো ফ্লাইট ও পণ্যখালাস বন্ধ থাকার কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানান শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও। একই সাথে বিলম্ব মাসুল যুক্ত হওয়ায় অনেক প্রবাসী নিজেদেও আনা পণ্য খালাস নিতে অনীহাও প্রকাশ করছেন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্যমতে, ইমপোর্ট কার্গো থেকে ২০২২ সালের জুনে বিমানবন্দর কার্গো ওয়্যারহাউস থেকে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৩ টাকা আয় হয়েছে। একই বছরের জুলাই মাসে ৩২ লাখ ২২ হাজার ৩৪২ টাকা, আগস্টে ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬২ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪ টাকা, অক্টোবরে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ টাকা, নভেম্বরে ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৭ টাকা আয় হয়।
বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার পর ডিসেম্বর মাসে পণ্য খালাস চালু হলে ওই মাসেই ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৪ টাকা রাজস্ব আয় হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। আর কার্গো খালাস বন্ধ থাকার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আয় নেমে আসে চার লাখ টাকায়। চলতি বছরের মার্চ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আয়ের এই ধারাবাহিকতা স্থির রয়েছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরের সক্ষমতার বড় একটি অংশ কার্গো পরিবহন ও কার্গো ওয়্যারহাউসের সক্ষমতা। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন বিমানবন্দরের সক্ষমতা নিরুপণ করে প্রতিবেদন দেয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ থাকায় এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কাছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কমেছে আয়ও।











































