
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চশমাহিলের বাসায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তারা নিজেদের ওই বাসার কর্মচারী বলে দাবি করেছেন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে আধাঘন্টা ধরে অভিযানের পর পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান এই তথ্য জানান। তিনি জানান, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফেসবুকে একজন জুলাই যোদ্ধার দেওয়া একটি স্ট্যাটাস তাদের নজরে আসে। সেখানে উল্লেখ ছিল, ১৩ নভেম্বরের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায় একত্রিত হয়ে মিটিং করছেন। স্ট্যাটাস দেওয়ার পর আরও কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা ওসিকে ফোনেও বিষয়টি অবহিত করেন। তখন বিষয়টি সিএমপির ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। নির্দেশনা পেয়ে অভিযান চালানো হয়।
ওসি বলেন, যেসব জুলাই যোদ্ধা আমাদের তথ্য দিয়েছেন, তারাও আমাদের সঙ্গে এই বাসায় আসতে চেয়েছিলেন। আমরা শুধু দু‘জন ছাড়া কাউকে অ্যালাউ করিনি। পুলিশের অনুমতি ব্যতীত কেউ যাতে সেখানে ঢুকতে না পারে আমরা সজাগ ছিলাম। আমরা পুরো ভবনে অভিযান চালিয়েছি। ওই বাসায় এখন পরিবারের সদস্য কেউ থাকে না। সাতজনকে পেয়েছি, যারা নিজেদের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাদের আমরা আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। যাচাইবাছাই করে তাদের মধ্যে যদি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কিংবা ফ্যাসিস্টের সহযোগী কেউ থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওসি সোলাইমান আরও জানান, নওফেলের ছয়তলা বাসার চতুর্থ তলায় রান্নাবান্নার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নিয়মিত রান্না হয় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও বিএনপি নেতা নিয়াজের যৌথ মালিকানায় নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদে ইয়াকুব সেন্টারে ক্যাফে মিলানো নামে একটি রেস্তোঁরা আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রেস্তোঁরাটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ফুডপান্ডা বা অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে খাবার সরবরাহ করা হয়।
নওফেলের বাসার চতুর্থ তলার ওই রান্নাঘরে সেই খাবার রান্না করা হয় এবং প্যাকেটে ভরে সেটা সরবরাহ করা হয়। বুধবার দুটি অর্ডার পেয়েছিলেন তারা, যেগুলো দুপুর ২টার মধ্যে সরবরাহ করা হয়। অনলাইনে কার্ডের মাধ্যমে বা নগদ টাকা গ্রহণ করে বিল দেওয়ার দুটি মেশিন ওই বাসায় পেয়ে সেগুলো জব্দ করেছে পুলিশ। নওফেলের বাসায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে সভা করার খবরটি গুজব ছিল বলে জানান ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান।
এদিকে সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায় যখন অভিযান চলছিল, তখন নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ৫০-৬০ জন তরুণ-যুবক লাঠি নিয়ে জড়ো হয়ে জুলাই ঐক্য, চট্টগ্রামর ব্যানারে ¯ে¬াগান দিচ্ছিলেন। ব্যানারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে লাঠি মিছিলের কথা উল্লেখ করা হয়।
জুলাই ঐক্য, চট্টগ্রামের একজন সংগঠক বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের সাম্প্রতিক যে অপতৎপরতা সেটা রুখে দিতে আমরা লাঠি মিছিলের আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা বার্তা দিতে চাই যে, জুলাই আন্দোলনের অধিকারের প্রশ্নে এবং ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় সজাগ আছি। আমরা যারা জুলাই বিপ্লবের সময় এই বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট এলাকায় লড়াই করেছি, আমরা এখনো রাজপথে আছি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ২০১৮ সালে শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নওফেল দেশত্যাগ করেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন।










































