বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

নির্ঘুম রাত কাটালেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে আসা যাত্রীরা

নির্ঘুম রাত কাটালেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে আসা যাত্রীরা
print news

রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির ফলে সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ছেড়ে যায়নি কোনো ট্রেন। এর মধ্যে যে সকল যাত্রী কর্মবিরতির খবর না জেনে স্টেশনে এসেছেন তারা পড়েছেন নানা দুর্ভোগে। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন রেল স্টেশনেই।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এবং পুরাতন স্টেশন থাকা যাত্রীরা এই দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রেলের সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেমে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশের ঘোষণা এবং টিকিটের টাকা ফেরত নেওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছেন স্টেশনের দায়িত্বশীলরা।

রেলওয়ের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেসসহ একাধিক আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন নির্ধারিত শিডিউল ছিলো। কিন্তু রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির ফলে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়নি কোনো ট্রেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনে কিছু বগি ও ইঞ্জিন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের কোনো যাত্রীকে খুব একটা দেখা যায়নি। হাতেগোনা কয়েকজন যাত্রী এসেছেন, যারা এই কর্মবিরতির খবর আগে থেকে জানতেন না।

স্টেশনে আসা জাকির হোসেন নিরব নামে এক যাত্রী জানান, তিনি আগে থেকে এই ধর্মঘটের খবর জানতেন না, ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার জন্য রাতে স্টেশনে এসেছেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় মহাদুর্ভোগে পড়েছেন। স্টেশনেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনে বেশকয়েকজন লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের দেখা গেছে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে। চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর যেতে সকাল ৬টায় পুরাতন স্টেশনে এসেছিলেন আবু জাফর নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, স্টেশনে এসে জানলাম ট্রেন চলাচল বন্ধ। আগে থেকে এই কর্মবিরতির খবর জানা ছিলো না। তাই স্টেশনে অপেক্ষা করছি। এর মধ্যে টয়লেট ও মুখ ধোয়া নিয়ে চরম কষ্টে আছি।

মোবারক হোসেন নামে আরেক যাত্রী এ সময় বলেন, চাঁদপুর যাওয়ার জন্য ভোরে স্টেশনে এসেছি। কিন্তু শীতের সকালে কষ্ট করে স্টেশনে এসে জানতে পারলাম কোনো ট্রেন চলাচল করছে না। ফলে স্টেশনেই সময় কাটাচ্ছি। শীত ও প্রাকৃতিক ডাকে চরম দুর্ভোগে আছি।

সাদিয়া জাহান নামের এক নারী যাত্রী বলেন, কক্সবাজার যাওয়ার জন্য আমরা ট্রেনের টিকিট নিয়েছি। অগ্রীম হোটেল বুকিং দেয়া আছে। এখন ট্রেন না চলায় ঝামেলায় পড়েছি। রেল কর্তৃপক্ষ টিকিটের টাকা ফেরত নেওয়ার কথা বললেও হোটেল বুকিংসহ আনুষাঙ্গিক খরচের টাকা কি ফেরত পাবো?

প্রসঙ্গত, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।

সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ স¤পাদক মো. মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, রেলওয়ের রানিং স্টাফরা ১৬০ বছর ধরে অবসরের পর মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পেয়ে আসছে। রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ট্রেন সচল রাখে রানিং স্টাফরা। তাঁদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি বা জাতীয় দিবসের বন্ধ নেই।

কিন্তু গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেদের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় ঢাকতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর রেলওয়ের রানিং স্টাফদের বেতন, পেনশন ও আনুতোষিক কমিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের প্রাপ্যতার পক্ষে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় জটিলতা সৃষ্টি করছে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page