বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দেন হাসিনা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দেন হাসিনা
print news

আগস্ট পতনের কয়েকদিন আগে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে গিয়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতে পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।

সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। অর্থাৎ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলীর কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদেরকে জানিয়েছেন। এর তথ্য-প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের যেসকল সন্তানরা শহিদ হয়েছেন, তাদের মৃতদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেওয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহিদ হয়েছেন তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে- এই কথাটিও লিখতে দেওয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহিদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে- জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা-আক্রমণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, শহিদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই। আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে, সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, দ্রুত শহিদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে- কী ধরনের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্মমতার প্রমাণসমূহ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক করার পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

ঈশান/খম/মসু

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page