
বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটে চট্টগ্রামে দেদারছে বিক্রয় হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। তাও বোতলজাত সয়াবিন তেলের মুল্যে। যা দেখে হতভম্ব হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
গত সোমবার তারা চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের পাইারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও কয়েকটি খুচরা বাজার পরিদর্শন করেন। এ সময় অধিক বোতলজাত সয়ারিকবন তেলের মূল্যে খোলা সয়াবির তেল বিক্রি করায় চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছেন।
এতে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকেননি চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল দুই সংস্থা। ত্বরিৎগতিতে মতবিনিময় সভা ডেকে আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ে নির্ধারণ করে দেন খোলা সয়াবিন তেলের মূল্য। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) দুপুর থেকে খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বিক্রি হবে লিটার ১৬০ টাকায়।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টায় নগরের সার্কিট হাউসে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এতে ওই দাম নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দামের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে ব্যবসায়ী গ্রুপ টিকে ও সিটি গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা এবং ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যে চসিক মেয়র বলেন, রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি। ভোজ্যতেলকে প্রাধান্য দিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত দামের বাইরে গিয়ে বেশি দামে কেউ বিক্রি করলে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের সুযোগে অনেকেই খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মেয়র শাহাদাত বলেন, বাংলাদেশের বাইরে যেসব মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আছে, সেগুলোতে রমজানে সওয়াবের উদ্দেশে ভর্তুকি দেয়। কম মূল্যে তারা পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু একমাত্র আমাদের দেশ, বাংলাদেশ। যেখানে দেখা যায়, কতিপয় কিছু ব্যবসায়ীর কারণে রাতারাতি পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি চসিক থেকেও বাজার মরিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, অভিযানে গিয়ে যদি অধিকমূল্যে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট চলছে। সেটা কাটিয়ে উঠার জন্য সবার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেল খুচরায় সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। কেউ চাইলে এরচেয়ে কমেও বিক্রি করা যাবে। তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না। এ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো ব্যবসায়ী খুচরা বা পাইকারি বাজারে বেশি দামে তেল বিক্রি করেন। তাহলে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার (৩ মার্চ) বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকটে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে যান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরিদর্শনে গিয়ে ভোজ্যতেল উধাওর সত্যতা পেয়ে তেলের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ডাকেন তারা দু‘জন।
মঙ্গলবার ওই বৈঠকে সবার মতামতের ভিত্তিতে আমদানিকারক থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত খোলা তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমদানিকারকরা ১৫৩ টাকা, ট্রেডার্সে ১৫৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকা প্রতিলিটার খোলা তেল বিক্রি করবে। যা আজ (মঙ্গলবার) থেকে কার্যকর হবে। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এই মূল্য বলবৎ থাকবে। যেকোনো পর্যায়ে কেউ যদি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি।