
- ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম হিসেবে যোগদান করেন মো. সুবক্তগীন। এরপর থেকে তিনি যেদিন দপ্তরে থাকেন সেদিন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। সাংবাদিকসহ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার সুযোগও হয় না তার। যা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার মতো। এর আগে করোনাকালীন সময় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন মো. সুবক্তগীন। এ সময় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ সময় তিনি তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সে হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ছত্রছায়ায় ছিলেন তিনি। আর এখন খোলস পাল্টে তিনি পরিচয় দেন ছাত্রজীবনে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে’। অভিযোগ রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই)। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা রেলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ বা পণ্য রাখা হয়। সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। কিন্তু এই যন্ত্রাংশের লোভ স্বয়ং রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। যাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এই ইয়ার্ড থেকে প্রতিদিন চুরি হচ্ছে কোটি টাকার পণ্য ও যন্ত্রাংশ।
চুরির এ কাজে সিজিপিওয়াই ঘিরে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী সংঘবদ্ধ চোর সিন্ডিকেট। যাদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ইয়ার্ডের কর্মচারি, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও কতিপয় লোড-আনলোড শ্রমিক। সবমিলিয়ে যেন চোরের খনি এই সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা। অথচ অন্য কারও প্রবেশে নেই তেমন কোন বাঁধা।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কথা বলার কথা হয় সিজিপিওয়াইয়ের সিআই মো. আবু সুফিয়ানের সাথে। তিনি বলেন, সাংবাদিক প্রবেশে কোন বাঁধা নেই। তবে ইয়ার্ডে প্রবেশে প্রত্যেকের পরিচয় এন্ট্রি করার নিয়ম রয়েছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো বাঁধার সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা। অন্য কারও নাম এন্ট্রি বা আরএনবির বাধার সম্মুখীন ছাড়াই ইয়ার্ডে প্রবেশ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সিজিপিওয়াই ও এসআরবি স্টেশন এলাকায় রেলের মালামাল চুরি ও অপরাধমূলক কার্যক্রম বেড়েছে আগের চাইতে কয়েক গুণ। আর সরকার পতনের পর অপরাধীরা সবাই যেন বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইন-আদালত, প্রশাসন কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না।
তিনি জানান, গত ৫ মার্চ ভোরে সিজিপিওয়াই এলাকায় অবস্থানরত একটি ইঞ্জিন থেকে তিনটি ব্যাটারি চুরি হয়। এ সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে একজন এলএম ও একজন এএলএমকে বরখাস্ত করা হয়। আর চুরির মতো কিছু হলেই সবাই বলে আরএনবি সদ্যসরা কাজ করে না। তাই হয়তো কঠোর নজরদারি করছে।
সিজিপিওয়াই চৌকির নায়েক দুলাল জানান, চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই এলাকায় গেল ১৭ জানুয়ারি চোরচক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। তাদের মধ্যে একজন রেলওয়ের স্থায়ী এবং অপরজন অস্থায়ী কর্মচারী। এ ঘটনার পর গ্রেপ্তারকৃত দুইজনসহ মোট তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনের দায়িত্বে থাকা কর্মচারিদের অবহেলায় যদি কোন চুরির ঘটনা ঘটে, তবে এই দোষ কার? যে যাই বলুক চুরি ঠেকাতে রেলওয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা আমাদের কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।
এসআরবি স্টেশনের ইনচার্জ হাবিলদার পঙ্কজ রায় বলেন, আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেরা নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়ছে। আমরা বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়ে চোরচক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে আমাদের লোকবল সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ছে।
আরএনবি’র সদস্যরা জানান, তাদের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে ওই সকল চোরচক্র বিভিন্ন ধরণের নাটক সাজাচ্ছে। যা আরএনবি’র কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে! এছাড়াও তারা লোকবল সংকটকে নিরাপত্তা ত্রুটির মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন। আরএনবি সদ্যসদের অভিযোগ, একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে।
সূত্র মতে, নগরীর বন্দর থানাধীন এলাকায় অবস্থিত সিজিপিওয়াইতে বন্দরে আসা রেলের পণ্য রাখা হয়। এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) পর্যন্ত কনটেইনার ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও এখান থেকে বিটিও (ট্যাংক ওয়াগন), বিসি ওয়াগন ও বিকেএইচ ওয়াগন দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। এতে একটি লোকোশেড ও সিপিএ (ট্রানজিট) ইয়ার্ড রয়েছে। যেখানে সার্বক্ষনিকভাবে সক্রিয় রয়েছে চোর চক্র।
চুরির ঘটনার সাথে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা থাকার অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. সুবক্তগীনের মুঠোফোনে একাধিবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সম্প্রতি সশরীরে দপ্তরে গিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলা এড়িয়ে যান।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম হিসেবে যোগদান করেন মো. সুবক্তগীন। এরপর থেকে তিনি যেদিন দপ্তরে থাকেন সেদিন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। সাংবাদিকসহ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার সুযোগও হয় না তার। যা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার মতো।
এর আগে করোনাকালীন সময় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন মো. সুবক্তগীন। এ সময় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ সময় তিনি তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সে হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ছত্রছায়ায় ছিলেন তিনি। আর এখন খোলস পাল্টে তিনি পরিচয় দেন ছাত্রজীবনে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে।